পীরগঞ্জ প্রতিনিধি ঃ আজ ১৭ এপ্রিল। ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সদস্যরা পীরগঞ্জে প্রথম হানা দেয়। এ দিনই রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, ব্যবসায়ী, শ্রমিকসহ সাত বাঙালিকে ধরে নিয়ে পীরগঞ্জ-ঠাকুরগাঁও সড়কের জামালপুর (ভাতারমারী) আখের খামারে রাস্তার পাশে গুলি করে এবং বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে।
এলাকার প্রবীন ব্যক্তি ও মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সেদিন সকাল ১০টার দিকে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী পীরগঞ্জে ঢুকেই এলোপাতাড়ি গুলি করতে শুরু করে। সেই সঙ্গে পীরগঞ্জ ডাকবাংলো, আওয়ামী লীগ কার্যালয়, দোকানপাট ও তেলের গুদামসহ বিভিন্ন জায়গায় আগুন ধরিয়ে দেয়। দুপুর পর্যন্ত তান্ডব চালিয়ে ফিরে যাওয়ার সময় তৎকালীন থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডাক্তার সুজাউদ্দীন আহাম্মদ, পীরগঞ্জ সরকারী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফা, হোটেল ব্যবসায়ী মোজাফ্ফর হোসেন, ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার, কৃষক আতিউর রহমান এবং কাঠমিস্ত্রি সুনীল কুমার শীল ও বীরেন্দ্রনাথ শীলের হাত-পা বেঁধে গাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়ে ঐ ফার্মের খোলা মাঠে হত্যা করে। পরে মুক্তিযোদ্ধাসহ পরিবারের লোকজন তাদের মরদেহ এনে নিজ নিজ এলাকায় দাফন করেন।
শহিদদের স্বরণে দীর্ঘদিন পরে হলেও ভাতারমারী ফার্মের তেতুলতলায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মান করা হয়েছে। শহিদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক গোলাম মোস্তফার সমাধি সংরক্ষনে সরকারী ভাবে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর কাজ চলমান রয়েছে। অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা, ডা সুজাউদ্দীন আহম্মদ ও আব্দুল জব্বার শহিদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেট ভুক্ত হয়েছেন। অন্যরাও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে আওয়ামীলীগ নেতা শহিদ ডাক্তার সুজাউদ্দীন ও তার ভাই মোজাফ্ফর হোসেনের সমাধির স্মৃতি চিহৃ মুছে যেতে বসেছে।
শহিদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক গোলাম মোস্তফার ছেলে সহকারী অধ্যাপক আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, তার পিতার সমাধি সংরক্ষনের কাজ হচ্ছে। এতে তারা খুশী। কিন্তু একটি গোষ্ঠীর বিরোধীতায় তা বারবার হোচট খাচ্ছে। তিনি দ্রæত নির্মান কাজ শেষ করার জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
পীরগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি জয়নাল আবেদীন বলেন, এ দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে পীরগঞ্জ প্রেসক্লাব ২০১৫ সালে প্রথম ১৭ এপ্রিল পীরগঞ্জ গণহত্যা দিবস পালন করে। প্রেসক্লাবের কর্মসূচির সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন সংগঠন অংশ নেয়। এর পর কয়েক বছর বছর আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড দিনটি পালন করে। আমরা এসব কর্মসূচির সঙ্গে ছিলাম। করোনা পরিস্থিতির কারণে দু’বছর ধরে আনুষ্টানিক ভাবে তেমন কোন কর্মসূচী পালন করা হয়নি। এবার পীরগঞ্জ প্রেসক্লাবের সহযোগীতায় বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনী, ঠাকুরগাও জেলা ইউনিট প্রেসক্লাব সভা কক্ষে আলোচনা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে।
পৌর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের আহবায়ক নুরুজ্জামান বলেন, ‘আজ (১৭ এপ্রিল) মুজিবনগর দিবস। সেই সাথে পীরগঞ্জের মানুষের কাছে গণহত্যা দিবস। দিবসটি পালনে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সব সময়ই সহযোগীতা করে আসছে। আগামীতেও করবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহরিয়ার নজির বলেন, জামালপুর ফার্মে নির্মিত গনহত্যার স্মৃতিস্তম্ভ যুগোপযোগী করা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে শহিদ অধ্যাপক গোলাম মোস্তফার সমাধি সংরক্ষন করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সবার সমাধি সংরক্ষন করা হবে।