খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) এডিপির প্রকল্পে আর্থিক অনিয়মের তদন্ত প্রতিবেদনের মন্তব্যের উপর প্রমানসহ ব্যাখ্যা চেয়ে একজন জনপ্রতিনিধি ও দুই কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। স্থানীয় সরকার বিভাগ, দিনাজপুরের উপ-পরিচালক মোখলেছুর রহমানের তদন্ত প্রতিবেদনের উপর ব্যাখ্যা চেয়ে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে গত (০৬ আগষ্ট) স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ আবু নাছের স্বাাক্ষরিত এক চিঠিতে উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও এবং প্রকৌশলীকে প্রমাণসহ ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দিয়েছেন।
এর আগে গত ৩ জুলাই উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মঞ্জিল আফরোজ পারভীনসহ ৬ জন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় এবং ডিডিএলজি বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন।
খানসামা উপজেলার বর্তমান নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তাজ উদ্দিন চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (দিনাজপুর) মোখলেছুর রহমান বলেন, আমিও চিঠি পেয়েছি।
চিঠিতে জানা যায়, গত ১২ জুলাই খানসামা উপজেলা পরিষদের কার্যালয় সরেজমিনে তদন্ত করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মোখলেছুর রহমান। তদন্ত শেষে তিনি স্থানীয় সরকার বিভাগে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে উপ-পরিচালক মোখলেছুর রহমান উল্লেখ করেন, প্রকল্প গ্রহণের সময় বিশেষ কারনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার উপস্থিত না থাকার কারণে সভা পরিচালনা করেন সহকারী কমিশনার (ভ‚মি), যা সঠিক হয়নি। গুরুত্বপ‚র্ণ এ সভা পিছিয়ে দেয়া যেত বলে মতামত দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অনুপস্থিতিতে প্রকল্পগুলো গ্রহণ করা হয় এবং উপজেলা প্রকৌশলী সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ আলোচনা না করেই প্রকল্প গ্রহন করেন। উপজেলা পরিষদের উন্নয়ন বরাদ্দের ৩০ শতাংশ পিআইসি এবং কোটেশনের মাধ্যমে এক বারে ভৌত অবকাঠোমো নির্মাণের জন্য ১০ লাখ এবং বছরে মোট ৬০ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারবে। এতে সর্বশেষ বরাদ্দকৃত ৫০,০০,০০০/- (পঞ্চাশ লাখ) পুরোটাই পিআইসি ও কোটেশনের মাধ্যমে প্রকল্প ও বাস্তবায়ন সঠিক হয়নি, কারন ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে প‚র্বেও পিআইসি ও কোটেশনের মাধ্যমে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, উপজেলা পরিষদের আর্থিক ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়ালের ২০ অনুচ্ছেদে (পৃষ্ঠা নং ৩৬) পিআইসি চেয়ারম্যান/সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির কথা বলা হয়েছে এবং উক্ত কমিটিকে উপজেলা পরিষদ কর্তৃক অনুমোদনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এ প্রকল্পগুলো গ্রহনে তা করা হয়নি। পিআইসি কমিটির সদস্যদের কর্তৃক কাজ শুরুর ও শেষের সভা সংক্রান্ত কোন রেজুলেশন নথিতে পাওয়া যায়নি বলেও উল্লেখ করেন তিনি। চ‚ড়ান্ত বিলের জন্য করা আবেদনে প্রকল্প কমিটির সভাপতি কর্তৃক স্বাক্ষর হয়নি অথচ এ আবেদনের ভিত্তিতে প্রকল্পের বিল পরিশোধ করা হয়েছে। নথিতে প্রকল্পের শুরুর ও শেষের ছবি নেই। তাই প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়টি অনেক ক্ষেত্রেই নিশ্চিত হওয়া যায়নি। প্রায় প্রকল্পের কাজই সমাপ্ত হয়নি অথচ পুরো বিল পরিশোধ করা হয়েছে, যা গুরুতর আর্থিক অনিয়ম।
সে কারণে জন প্রতিনিধিদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে তদন্ত করে দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনের মন্তব্যের উপর প্রমানসহ ব্যাখ্যা ১০ (দশ) কার্যদিবসের মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও এবং উপজেলা প্রকৌশলীকে প্রমানসহ ব্যাখ্যা দিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রেরনের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে উপজেলা চেয়ারম্যান সফিউল আযম চৌধুরী লায়ন ও উপজেলা প্রকৌশলী শাহ মো. ওবায়দুর রহমানের সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সাড়া মিলেনি।
তবে তৎকালীন ইউএনও রাশিদা আক্তার মুঠোফোনে জানান, তিনি এখনো চিঠি হাতে পাননি। তবে শুনেছেন। তিনি বলেন, এটা তদন্তের বিষয় তাই আমি কিছু বলতে পারবনা। যদি কেউ অপরাধ করে তাহলে অবশ্যই তার শাস্তি হবে।
তদন্তকারী কর্মকর্তা স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (দিনাজপুর) মোখলেছুর রহমান বলেন, গত মাসে আমি সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেই। পরবর্তীতে প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে মন্ত্রণালয় থেকে প্রমাণসহ ব্যাখ্যা চেয়ে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমিও তদন্তকারী হিসেবে অবগতি নোটিশ পেয়েছি।