বিকাশ ঘোষ ,বীরগঞ্জ(দিনাজপুর)প্রতিনিধি ॥-দিনাজপুর-১ (বীরগঞ্জ-কাহারোল)আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য ও ইয়াসমিন ধর্ষন ও হত্যার প্রথম প্রতিবাদকারী নেতা মনোরঞ্জন শীল গোপাল বলেছেন, নারী নির্যাতন প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। যার জন্য প্রয়োজন সচেতনতা ও সুন্দর রাজনৈতিক পরিবেশ। তিনি বলেন, ১৯৯৫ সালে ইয়াসমিন আন্দোলনের যে দাবীগুলো ছিল তা তৎকালীন বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকার পরেও পুরণ করেনি। সেই সময় বিএনপি দিনাজপুরবাসীর সাথে প্রতারনা করেছে। শেখ হাসিনা ইয়াসমিন আন্দোলনের সাথে একাত্নতা ঘোষনা করেন এবং পরবর্তীতে ক্ষমতায় এসে সেই দাবীগুলি পুরণ করেছে।
‘ইয়াসমীন ট্রাজেডির ২৮ বছর পূর্তি ও গণআন্দোলনে শহীদ সামু-কাদের-সিরাজ স্মরণে গতকাল সোমবার দশমাইলের পূর্ব সাদিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে আয়োজিত ‘স্মরণ সভায়’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, দিনাজপুরে এমন কোন আন্দোলন নেই, যেই আন্দোলনে আমি ছিলাম না। ইয়াসমিন আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে ১২টি মামলার মধ্যে ৯টি মামলায় ১ নম্বর আসামী ছিলাম আমি। আমাকে দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।
ইয়াসমিন ট্রাজেডি পরিষদের আহবায়ক মোঃ মজিদুল ইসলাম মাষ্টারের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বীরগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ড. মাসুদুল হক, জেলা আওয়াম লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. আব্দুল করিম, কাহারোল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম ফারুক, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ, সাবেক সদস্য বজলুল করিম বাবলু, সুন্দরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন মানিক। সঞ্চালনায় ছিলেন সুন্দরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হামিদুল ইসলাম। পরে আন্দোলনে শহীদ সামু-কাদের-সিরাজ স্মরণে একমিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৯৫ সালের এই দিনে তৎকালীন বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন শহরে কতিপয় বিপথগামী পুলিশ কর্তৃক কিশোরী ইয়াসমিন ধর্ষিত ও হত্যার শিকার হওয়ার প্রতিবাদী জনতার মিছিলের উপর পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলে সাতটি তাজা প্রাণ ঝরে পড়ে। রক্তে রঞ্জিত হয় রাজপথ। প্রতিবাদী যুবক সামু, গ্রামের নিরিহ কৃষক কাদের ও রিক্সা চালক সিরাজের লাশ পাওয়া গেলেও বাকি ৪টি লাশ পুলিশ গুম করে বলে অভিযোগ রয়েছে। সেই থেকে তাদের স্মরণে ২৭ শে আগস্ট দিনাজপুর ট্রাজেডি দিবস পালিত হয়ে আসছে।
১৯৯৫ সালের ২৪ আগষ্ট কিশোরী ইয়াসমিন ৩ পুলিশ সদস্যের দ্বারা ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হওয়ায় দোষী পুলিশদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবীতে ২৭ আগষ্ট বেলা ১১টার দিকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে স্মারকলিপি দিতে শহরের রামনগর মাঠ হতে হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ জনতা মিছিল বের করে। মিছিলটি যখন শহরের তৎকালীন লিলি সিনেমা মোড় হয়ে পূর্ব দিকে সদর হাসপাতাল হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দিকে যাচ্ছিল, তখন মুন্সিপাড়া পুলিশ ফাঁড়ী ও রাস্তায় থাকা বিপুল সংখ্যক দাঙ্গা পুলিশ একযোগে প্রতিবাদী জনতার শান্তিপূর্ন মিছিলের উপর নির্বিচারে গুলি বর্ষণ ও অসংখ্য টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। পুলিশের গুলিতে সামু, কাদের ও সিরাজসহ নাম না জানা ৭ জন নিহত হয়। আহত হয় ৩ শতাধিক। তৎকালীন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি প্রবীন জননেতা অ্যাডভোকেট এম. আব্দুর রহিম এর নেতৃত্বে আইনজীবীদের একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল হত্যকান্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে। পরবর্তীতে বিক্ষুব্ধ জনতা শহরে অবস্থিত ৪টি পুলিশ ফাড়ি ও পুলিশের ৪টি পিকআপ ভ্যান জ্বালিয়ে দেয়। বিক্ষোভের এই সুযোগ নিয়ে কতিপয় সাদা পোশাকধারী সরকারি লোক জনতার আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে দিনাজপুর প্রেসক্লাবসহ স্থানীয় ৫টি পত্রিকা অফিস আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে সন্ধ্যায় শহরে জারী করা হয় কারফিউ। পুলিশ প্রত্যাহার করে শহরে নামানো হয় তৎকালীন বিডিআর বাহিনীর সদস্যদের।
জনতার উত্তাল আন্দোলনের চাপে তৎকালিন সরকার সে সময়কার জেলা প্রশাসক মোঃ জব্বার ফারুক ও পুলিশ সুপার আব্দুল মোতালেবকে ২৯ আগষ্ট প্রত্যাহার করে নেয়। জেলার সকল পুলিশ বাহিনীর সদস্য পরিবর্তন করা হয়। আন্দোলনের তীব্রতা অনুমান করে ইয়াসমিন ধর্ষন ও হত্যার অভিযোগে পুলিশের এএসআই মঈনুল ইসলাম, কনষ্টেবল আব্দুস সাত্তার ও পিকআপ চালক অমৃত লাল বর্মন কে গ্রেফতার করতে বাধ্য হয় তৎকালীন প্রশাসন।
সোমবার , ২৮ আগস্ট ২০২৩ | ২রা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
