আমনের উৎপাদন ভাল ছিল এবং সাধারণত ডিসেম্বরের শুরু থেকে বাজারে আমন ধানের চাল আসতে শুরু করে। এরপর জানুয়ারিতে পুরোদমে বাজারে আমন চালের সরবরাহ দেখা যায়। কিন্তু গত এক সপ্তাহ থেকে মিল, পাইকারি ও খুচরা-প্রায় সব পর্যায়ে চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫-৬ টাকা। প্রচুর মজুদ থাকার পরেও আমন মৌসুমের শেষে ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা এর সুফল তেমন ভোগ করতে না পারলেও বেশি দামে চাল কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ভোক্তাদের।
গত ১০দিনের ব্যবধানে ধান-চালের বাজার অস্থির। বাজারে বস্তাপ্রতি (৭৫কেজি) ধানের দাম বেড়েছে ২০০টাকা থেকে ২৬০টাকা। বাজারে প্রকারভেদে কেজি প্রতি চালের দাম বেড়েছে ৫ থেকে ৬ টাকা। তবে অনেকে মনে করেন, বেশির ভাগ মোটা ধান মিল মালিক এবং মজুত ব্যবসায়ী বা মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে চলে গেছে।
দিনাজপুরে আবারো অস্থির হয়ে উঠেছে চালের বাজার। দাম বেড়ে যাওয়ায় অস্বস্থিতে পড়েছেন ভোক্তারা। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নি¤œআয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। কিছুদিন চালে বাজার নিয়ন্ত্রনে থাকলেও গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে সব চালের দাম বেড়েছে ৫-৬ টাকা পর্যন্ত।
শহরের বাহাদুর বাজারে দেখা যায়,এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিবস্তা (৫০কেজি) মিনিকেট চাল ২৬০০ টাকা থেকে বেড়ে ৩১০০ টাকায়, বিআর-২৮ জাতের চাল ২৬০০ টাকা থেকে বেড়ে ২৯০০ টাকায়, বিআর-২৯ জাতের চাল ২৩০০ টাকা থেকে বেড়ে ২৬০০ টাকায়, সুমন স্বর্ণ চাল ২১৫০ টাকা থেকে বেড়ে ২৫০০টাকায় এবং গুটিস্বর্ণ জাতের চাল প্রতিবস্তা ২১০০ টাকা থেকে বেড়ে ২৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সোমবার গোপালগঞ্জ হাটে ধান ক্রেতারা জানান, দশদিন আগে এই হাটে ব্রি-৫১ জাতের প্রতি বস্তা (৭৫কেজি) ধান বিক্রি হয় ২ হাজার ২৫০টাকা। আজ তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৪৫০ টাকায়। অনুরূপ বিআর-১১জাতের ধান ২২৫০ টাকা থেকে বেড়ে ২৪৫০ টাকা, ব্রি-৪৯ ধান ২১৫০ টাকা থেকে বেড়ে ২৪৪৫ টাকা, গুটি স্বর্ণ ২২০০ টাকা থেকে বেড়ে ২৪৩০ টাকা এবং সুমন স্বর্ণ ২২৫০ টাকা থেকে বেড়ে ২৫০০ টাকা। আর সুগন্ধি জাতের জিরা ধান ৪৮০০ টাকা থেকে বেড়ে ৫৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চাল কল মালিক গ্রæপ দিনাজপুরের যুগ্ম সম্পাদক আজিজুল ইকবাল চৌধুরী জানান, ধানের দাম বাড়লে চালের দাম বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। ব্যবসায়ী নীতিমালাকে তোয়াক্কা না করে আজকাল অনেকেই স্টক বিজনেসের নামে এসব ভোগ্যপণ্য মজুদ করছেন। বর্তমানে মিল মালিকদের চাইতে স্টক ব্যবসায়ীদের গুদাম ঘরে বেশি ধান আছে। মিল মালিকরা ধান কিনে চাল করেই বিক্রি করে দেয়। কিন্তু ব্যক্তি পর্যায়ে লাইসেন্স ছাড়াই স্টক ব্যবসায়ীরা এই পন্য আটকে রাখছে। বিষয়টি তদারকি করার দরকার প্রশাসনের। চালের বাজার বেশি হওয়ার এটাই মূল কারণ। তাছাড়া মিল মালিকদের উৎপাদন খরচও বেড়েছে।
উল্লেখ্য, দিনাজপুর জেলায় প্রতি বছর প্রায় ১৫ লাখ মেট্রিকটন চাল উৎপাদন হয় এবং এই অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে ৯ লাখ মেট্রিক টন চাল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হয়।