প্রকৃতির মঙ্গলের জন্য ঢাক-ঢোল, সানাই বাজিয়ে নেচেগেয়ে ধুমধামে কোন মানুষের নয় বরং দিনাজপুরে ব্যতিক্রমী বট আর পাকুড় গাছের বিয়ে দেয়া হয়েছে। ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী যেভাবে মানুষের বিয়ে হয়, সেভাবে এই দুই জোড়া বট-পাকুড়ের বিয়ে হয়।
দিনাজপুর শহরের রাজবাড়ী হিরাবাগানের মাঠে এই ব্যতিক্রমধর্মী বিয়ে আয়োজন করা হয়। অপরটি বট ও পাকুড় গাছের বিয়ে হয়েছে সদর উপজেলার শশরা ইউনিয়নের দাসাপাড়া গ্রামে।
বুধবার পূজার মধ্য দিয়ে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে রাত অবধি চলে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। দুই বিয়েতেই অতিথি আপ্যায়নে ছিল নিরামিষ খাবার।
বট আর পাকুড় গাছের বিয়ে ছিল জাকজমকপূর্ণ আয়োজন। সাজসজ্জা ও আলপনা এঁকে তৈরি করা হয় ছাদনাতলা ও মাড়োয়া। বিয়ে পড়ান চারজন করে আট পুরোহিত। পাকুড় গাছকে ‘বর’ ও বট গাছকে ‘কনে’ ধরে বিয়ে সম্পন্ন হয়।
কলা গাছ, সিঁদুরদানী, বিভিন্ন রকম ফুল ফলে তৈরি ছাঁদনাতলা। পুরোহিত মশাই পাঠ করছেন একের পর এক মন্ত্র। চারদিকে উৎসুক জনতার ভিড় অনেক।
দিনব্যাপী একদিকে বিয়ের ও পূজার সকল কার্যক্রম চলছে। অপরদিকে আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য চলছে রান্নাবান্না। আলু, বাঁধাকপি, গাজর, বেগুনসহ বিভিন্ন রকম সবজি দিয়ে নিরামিষ তরকারি আর ভাত রান্না।
দর্শনার্থী চন্দ্রনা মোহন্ত বলেন, ‘বট-পাকুড়ের বিয়ে দিলে আমাদের ধর্মীয়ভাবেই একটা পুণ্য লাভ হয়। অনেকেই আবার ছেলে বা মেয়ে সন্তান লাভের আশায় এই বিয়ে দেয়। অনেক আগে থেকে এই বিয়ের প্রথা চলে আসছে। আজ খুব আনন্দে আমরা বিয়ে অনুষ্ঠান করেছি। ’
বট-পাকুড় গাছের বিয়েতে বরের বাবা হিসেবে জগদীশ চন্দ্র মোহন ও কনের বাবা হিসেবে কন্যাদান করেন কালু চন্দ্র মোহন্ত। বিয়ের কাজ সম্পন্ন করেন পুরোহিত নারায়ণ চন্দ্র সাহা। বট-পাকুড়ের বিয়ে দিয়ে পুণ্য অর্জন করে কাঙ্ক্ষিত সন্তান লাভের আশায় এই আয়োজন বলে জানান বর-কনের বাবা।
দিনাজপুর শহরের হিরা বাগান এলাকার বিয়েতে বরের বাবা জগদিশ দেবনাথ ও মা পুতুল দেবনাথ জানান, তাদের কোনো ছেলে সন্তান নেই। তারা চার কন্যার জনক-জননী। তাই পুণ্যের আশায় ছেলে বেশে পাকুড় গাছকে বিয়ে দিয়ে ঋণ পরিশোধ করেছেন।
কনের বাবা কালু মহন্ত ও মা আলপনা মহন্ত জানান, তাদের কোনো কন্যা সন্তান নেই। তাদের দুই ছেলে। তাই তারা বটগাছকে মেয়ে সাজিয়ে বিয়ে দিয়ে মেয়ে বিয়ের দায় পরিশোধ করেছেন।
পুরোহিত নারায়ণ চন্দ্র বলেন, ‘বট-পাকুড়ের বিয়ে দিলে পরিবারের অমঙ্গল দূর হয়। লোকাচার মেনে সনাতন রীতি অনুযায়ী ছেলেমেয়েদের যেভাবে বিয়ে হয় সেভাবেই বট-পাকুড়ের বিয়ে দেওয়া হলো। এটিকে বিয়ে বললেও আসলে এটি হলো বট-পাকুড়কে একসঙ্গে স্থাপন করা। কারণ বট-পাকুড় একসঙ্গে জন্মায় না। তাই তাদের বিয়ে দেওয়া হয়। এর মধ্য দিয়ে তাদের পরিবারের অমঙ্গল দূর হয়ে যাবে আমি মনে করি।