বিরল প্রতিনিধি\ দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ব্যানানা জাতের আম দেশের গÐি পেরিয়ে তিনটি দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠানো হয়েছে।
বিরল উপজেলার মমিনুল ইসলামের আম বাগান থেকে এই প্রথম একশ কেজি আম সুইজারল্যান্ডে প্রেরণ করা হল। এছাড়া পর্যায়ক্রমে সুইডেন ও কাতারেও তিন মেট্রিক টন ব্যানানা আম, কাটিমন, বারি-৪ জাতের আম রপ্তানি করা হবে।
মমিনুল ইসলামের বিরল উপজেলার সদর ডাঙ্গার ৮ বিঘা জমিতে ব্যানানা আম, বাবী ফোর কাটিমন ও বিএন সেভেন জাতের আম চাষ করা করেছে। বাগানের বাছাইকৃত ব্যানানা জাতের আম ক্যারেট ভর্তি করে প্রথম চালান হিসেবে সুইজারল্যান্ডে পাঠানো হয়েছে।
আমচাষি মমিনুল ইসলাম বলেন, রাজশাহী অঞ্চলের মানুষেরা দিনাজপুরের বিরলের বিভিন্ন এলাকায় এসে ১০ থেকে ১৫ বছরের জন্য লিজ নিয়ে আমের চাষ শুরু করেন। তাদের আম চাষ দেখে নিজে উদ্বুদ্ধ হয়ে বিরলের কৃষি স¤প্রসারণ অফিসের পরামর্শক্রমে আম বাগান শুরু করি। গত ২০১৯ সালে ৮ বিঘা জমির ওপর এই আম চাষের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। বিরল কৃষি বিভাগের দিক নির্দেশনায় সম্পূর্ণ জৈব সার ও বালাইনাশক ব্যবহার করে আম চাষ করা হচ্ছে। গত বছর আম গাছে সামান্য পরিমাণ আম ধরলেও এবার ব্যাপক আম ধরেছে। ছোট ছোট ব্যানানা জাতের আমের গাছে ১০০ থেকে ২৫০টি পর্যন্ত একেকটি গাছে আম ধরেছে এবং চমৎকার আমের আকার ও রং হওয়ার কারণে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রথমে স্বল্প পরিমাণে আমচাষ শুরু করলেও সফলতা দেখে দিন দিন চাষে আগ্রহ বেড়ে যায়। বর্তমানে বিরলের কয়েকটি ইউনিয়নে জমি লিজ নিয়ে ৩৬ বিঘা জমির ওপর আম বাগান করেছি। এখন প্রায় ৫ হাজার ৫০০টি বিভিন্ন জাতের আমের গাছ রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমার এই বাগানে ২৫ থেকে ৩০ জন মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। গত বছর সদরডাঙ্গা এই আমবাগান থেকে স্বল্প পরিমাণ আম পাওয়া গেলেও এ বছর কয়েক টন আম এই আমবাগান থেকে পাওয়া যাবে আশা করছি। ২০জুন থেকে আম হার্ভেস্টিং শুরু করে দিয়েছি। বাগান থেকেই ব্যানানা জাতের আম ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আশা করছি এই দাম থাকলেও কয়েক লাখ টাকা এই বাগান থেকে আয় করা সম্ভব।
এবার সুইজারল্যান্ডের জুরিখ শহরে থাকা কয়েকজনের প্রবাসীর কাছে থেকে প্রতি কেজি ১২৫ টাকা দরে মঙ্গলবার ২০০ কেজি আম পাঠানোর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সুইডেন ও কাতারেও তিন মেট্রিক টন ব্যানানা জাতের আম পাঠানো হবে।
তিনি বলেন, দিনাজপুরের বিরল কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা হাসান ইমাম এর সহযোগিতায় গত বছর ইংল্যান্ডে আম প্রেরণ করেছিলাম। এবছর সুইডেন, সুইজারল্যান্ড ও কাতারে আম রপ্তানি করার জন্য নির্দেশনা পাওয়া গেছে। এই প্রথম আমার এই সদরডাঙ্গা আমবাগান থেকে ব্যানানা জাতের একশ কেজি আম কয়েকটি ক্যারেট করে রপ্তানি করছি।
বিরল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা হাসান ইমাম বলেন, দিনাজপুরের বিরল একটি কৃষি সম্ভাবনাময় উপজেলা হিসেবে ইতিমধ্যে সুনাম করিয়েছে। এই উপজেলায় ব্যাপক পরিমাণ লিচুর উৎপাদন হলেও এখন আমের উৎপাদনে অনেক এগিয়ে এসেছে।ইতিমধ্যেই অনেক চাষীরা আম চাষে উদ্বুদ্ধ হয়ে কয়েকটি বড় বড় আমবাগান তৈরি হয়েছে। গতবছর এই বিরল থেকেই ইংল্যান্ডে প্রথম আম পাঠানো হয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২৪সালে ও ইতিমধ্যে তিনটি দেশ থেকে আম রপ্তানি করার জন্য নির্দেশনা পেয়েছি। এই প্রথম ব্যানানা জাতের ১০০ কেজি আমের ২য় চালান হিসেবে পাঠানো হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে তিন মেট্রিকটন আমের চাহিদা তারা পাঠিয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই আম পাঠিয়ে দিতে পারব। এতে আম চাষি যেমন লাভবান হবে ঠিক দিনাজপুরের বিরল অর্থনৈতিকভাবে সচল হবে।