বিকাশ ঘোষ, বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: দিনাজপুরের বীরগঞ্জে দীর্ঘদিন থেকে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি দেখা নেই। স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপত হওয়ায় রোপা আমনসহ অন্যান্য ফসল পুরপুরি সেচনির্ভর হয়ে পড়েছে। অপরিকল্পিত সেচযন্ত্র ব্যবহারের ফলে কৃষক – কৃষাণীদের বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে। সেইসঙ্গে উপজেলার মোহাম্মদপুর, পলাশবাড়ী ও শতগ্রামসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও নেমে যাচ্ছে। খরার ঝুঁকিতে থাকা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় থাকা চাষাবাদসহ জনজীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে তীব্র গরমের কারণে আগাম জাতের আমন ধানে চিটা দেখা দেওয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েছে কৃষক। দিনাজপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত কয়েকদিন ধরে এই অঞ্চলে মাঝারি তাপপ্রবাহ চলছে। গত আগস্ট মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের চেয়ে তুলনামূলক কম থাকায় কৃষক সহ জনজীবনে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। গত শনিবার দিনাজপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৭.০ডিগ্রী সেলসিয়াস। প্রচণ্ড রোদ আর গরমে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন।আবহাওয়ার বৈরী আচরণে ঘরে ঘরে হয়েছে নানা রোগ-বালাই। বীরগঞ্জ উপজেলার সুজালপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় সরজমিন গিয়ে আমন ধান চাষ করে বৃষ্টির জন্য হাহাকার করছেন স্থানীয় কৃষকরা। দুঃচিন্তার ভাজ পড়ছে কৃষকদের কপালে। কৃষকদের রূপায়িত কৃষি জমিতে আবাদ করা ধানী জমি গুলো ফেটে যাচ্ছে। কৃষি জমি শুকিয়ে ধানের গাছে লালচে হয়ে যাচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের বেশির ভাগ জেলায় চলছে তীব্র খরা ও অনাবৃষ্টি। খাল বিল ও নদীর পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। ফসলের জমি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। একমাত্র পানির জন্য কৃষকের আমন ধানের ভালো ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছে বহু কৃষক। বৃষ্টি না হলে আমন ধান ক্ষতি গ্রস্থ হবে বলে কৃষকরা জানান, প্রচন্ড তাপ দাহ তীব্র খরা
আর অনা বৃষ্টিতে একদিকে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পরেছে। তেমন অন্য দিকে হুমকি মুখে পড়েছে মাঠে আমন ধানের ফসল। এতে ধানের ফসল নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌর সভার কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শরিফুল ইসলাম জানা যায়, এ বছর উপজেলায় আমন আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৯ হাজার ৫শ ৭৫ হেক্টর কৃষি জমি। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্জন হয়েছে ২৯ হাজার ৫শ’৭৫ হেক্টর জমিতে। বর্তমানেও নিম্ন এলাকায় জমিতে টুকটাক রোপন করছে কৃষকরা। তবে দীর্ঘদিন থেকে অনাবৃষ্টির কারণে বিপাকে পড়েছে কৃষকরা। তাদের একমাত্র অবলম্বন সেচ দিয়ে চাষাবাদ। উপজেলার বোয়ালমারী গ্রামের কৃষক সতীয় বর্মন বলেন,
আমরা বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি দিয়ে আমন চাষ করতাম। ধান লাগানো পর থেকে বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকতে গিয়ে আমার জমি ও বর্গা জমি ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ার পথে রয়েছে। সেচের পানি নিতে বাড়তি টাকা দিতে হয়। তাই বৃষ্টির জন্য অপেক্ষায় রয়েছি কিন্তু এছাড়া কোনো উপায় নেই। আমন ক্ষেতে পানিতে সময় লাগছে বেশি। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে জমিতে পানিতে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় গেলেছে। উপজেলার পাল্টাপুর ইউনিয়নের বেলতলী গ্রামের রিকশা চালক আবু সাঈদ জানান,প্রখর রোদ আর প্রচণ্ড দাবদাহে নাজেহাল অবস্থা। সারাদিন রিকশা চালিয়ে বাড়ি ফিরে অস্বস্তি লাগছে। গরমের কারণে আয় রোজকারও কম হচ্ছে। কয়দিন থেকে দুপুর হলেই রাস্তাঘাটে মানুষ শুন্য হয়ে যাচ্ছে। পৌরশহরের হাটখোলা এলাকায় আখের রস বিক্রেতা আমিনুল ইসলাম বলেন, বেশকিছু দিন থেকে প্রচণ্ড গরমে জনজীবনে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এতে আখের রস বিক্রি বেড়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় আখ সংকট দেখা দিয়েছে। তাই আধার বেলা ব্যবসা করে বাড়ি ফিরে আসছি।