দিনাজপুর প্রতিনিধি \
উপমহাদেশের বৃহৎ ঈদগাহ দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর এ শহীদ বড় ময়দানে ঈদের জামাতে লাখো মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করেন। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দেশের বৃহত্তম এই ঈদ জামাতে শান্তিপূর্ণ নামাজ আদায়ে নেয়া হয় কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
ঈদের দিন শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় লক্ষাধিক মুসল্লির অংশগ্রহণে এই ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে সকাল থেকেই মুসল্লিরা আসতে শুরু করে এবং কানায় কানায় পূর্ন হয়। ঈদ জামাতে অংশ নিতে দিনাজপুর সদর ছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও আশপাশের কয়েক জেলার মুসল্লিরাও এখানে আসেন।
ঈদ-উল আযহার ঈদ জামাতে ইমামতি করেন দিনাজপুর আন-নুজুম ইসলামিক একাডেমির পরিচালক মাওলানা মাহফুজুর রহমান। নামাজ শেষে ফিলিস্তিনসহ দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহ এবং ৭১ ও ২৪ এ শহীদ-আহতদের জন্য দোয়া করা হয়।
ইমামা মাওলানা মাহফুজুর রহমান বলেন, আল্লাহ তায়ালার রহমতে দেশের সবচেয়ে বড় ঈদগাহ মাঠে মুসল্লিরা সুন্দরভাবে নামাজ আদায় করতে পেরেছেন। আমরা নামাজ শেষে মোনাজাতের মাধ্যমে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় দোয়া করেছি। বিশেষ করে ফিলিস্তিনের মুসলিমদের জন্য দোয়া করেছি।
জামাতে অংশ নেন দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মো. রফিকুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মো. মারুফাত হুসাইন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের জনতা।
নীলফামারী থেকে এসেছিলেন রংপুর একটি হিমাগারের ম্যানেজার আব্দুস সাত্তার (৬৩)। তিনি জানান, আট বার এ মাঠে নামাজ আদায় করেছি। অন্যান্য বারের চেয়ে এবারে ব্যবস্থাপনা ভাল ছিল। এতো মুসল্লির সঙ্গে নিয়ে নামাজ আদায় করার অনুভূতি কাউকে বোঝানো কঠিন।।
বৃহৎ এ জামাতে অংশ নেওয়া মুসল্লিদের জন্য স্থাপন করা হয় শৌচাগার, ওজুর ব্যবস্থা। বসানো হয় মেডিকেল টিম।পুলিশ, র্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে নেওয়া হয় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সুষ্ঠুভাবে নামাজ সম্পন্ন হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
এ জামাতকে ঘিরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছিল কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা।এ জামাতকে ঘিরে ওয়াচ টাওয়ার, চেকপোষ্ট ও ড্রোন, সিসি ক্যামেরায় পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি ছিল কঠোর গোয়েন্দা নজরদারি। মাঠের আশপাশে র্যাব, পুলিশ, আনসার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সদস্যরাও ছিলেন তৎপর।
উল্লেখ্য, দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ বড় ময়দানের আয়তন প্রায় ২২একর। ২০১৭সালে নির্মিত ৫২গম্বুজের এ ঈদগাহ মিনার। এই ৫০গম্বুজের দুই ধারে ৬০ ফুট করে দুটি মিনার, মাঝের দুটি মিনার ৫০ফুট করে। ঈদগাহ মাঠের মিনারের প্রথম গম্বুজ অর্থাৎ মেহেরাবের (যেখানে ইমাম দাঁড়াবেন) উচ্চতা ৪৭ফুট। এরসঙ্গে রয়েছে আরও ৪৯টি গম্বুজ। এছাড়া ৫১৬ফুট লম্বায় ৩২টি আর্চ নির্মাণ করা হয়েছে। পুরো মিনার সিরামিক্স ইট দিয়ে আচ্ছাদিত। প্রতিটি গম্বুজ ও মিনারে রয়েছে বৈদ্যুতিক লাইটিং। রাত হলেই ঈদগাহ মিনার আলোকিত হয়ে ওঠে। ২০১৭সাল থেকে প্রতিবছর ঈদের নামাজ আদায় করেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। উপমহাদেশে এতবড় ঈদগাহ মাঠ দ্বিতীয়টি নেই।এছাড়াও পর্যটকদের কাছেও এটি দর্শনীয়।প্রতিটি গম্বুজ ও মিনারে রয়েছে বৈদ্যুতিক লাইটিং। পর্যটকদের কাছেও এটি দর্শনীয়।