ঠাকুরগাঁও: সীমান্তবর্তী জেলা ঠাকুরগাঁও জেলায় ভারতীয় ভেরিয়েন্ট ঠেকাতে প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে। করোনার সংক্রমণ উর্ধ্বমুখী রোধকল্পে মাঠে নেমে সচেতনতা মুলক প্রচারাভিযান শুরু করেছে। রোববার সকালে ডিসি অফিস চত্বর থেকে শুরু করে সচেতনতা মুলক প্রচার প্রচারনা। কোর্ট চত্বর এলাকার মানুষদের করোনা ভাইরাস থেকে দুরে রাখতে লিফলেট বিতরণ করেন জেলা প্রশাসক ড.কেএম কামরুজ্জামান সেলিম। এরপর শহরের চৌরাস্তা হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ন পয়েন্টে লিফলেট বিতরণ ছাড়াও মাস্ক বিহিন পথচারীদের মাস্ক পরিধান করান জেলা প্রশাসনের শীর্ষকর্তাগণ। এই অভিযানে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ ছাড়াও পুলিশ প্রশাসন, ৫০ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন ও উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধানগণ অংশ নেন।
এসময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে জেলা শহরে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ন স্থানে চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। এসময় তিনি সকলকে মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার আহবান জানান।
এদিকে জেলার চারটি উপজেলা ভারতীয় সীমান্ত ঘেষা। এসব সীমান্ত এলাকার উপজেলা শহরের মানুষ গুলোও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। মারাও যাচ্ছে। উপজেলা গুলোর মধ্যে সবচে বেশি বালিয়াডাঙ্গী ও হরিপুরে ঘেষা উপজেলায়। এসব শহরে সংক্রমণ ঠেকাতে বিজিবিও নিয়েছে নানা উদ্যোগ।
শনিবার রাতে সিভিল সার্জনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৫০জনের নমুনা পরীক্ষা করে গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ৪৯ জন। আর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন পীরগঞ্জ উপজেলার ৯৭ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ। সংক্রমণের হার শতকরা ৩৩ ভাগ। এই হার দিন দিন উর্ধ্বমুখী বলে জানায় স্বাস্থ্যবিভাগ।
এর আগের দিন শুক্রবার রাতে সিভিল সার্জনের প্রতিবেদনে বলায় হয়, জেলায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ২১ জন। ওই দিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ৪জন। তাদের বাড়ি সদর উপজেলা, পীরগঞ্জ, বালিয়াডাঙ্গী ও হরিপুর উপজেলায়।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার স্কুলের হাট গ্রামের বাসিন্দা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, রাতের অন্ধকারে এখনো চোরাকারবারীরা ভারতে অবৈধ ভাবে প্রবেশ করে গরু আনছে। চোরাচালানী পন্যের সাথে ভারতীয় ভেরিয়েন্ট আসতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও ৫০ বিজিবির ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, কোন ভাবেই যেন কেউ অবৈধ ভাবে ভারতে যেতে কিংবা কেউ আসতে না পারে সে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। সীমান্ত এড়িয়ায় নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এজন্য তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করে ৫০ বিজিবি’র ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, করোনার ভারতীয় ভেরিয়েন্ট রোধে একদিকে যেমন নেওয়া হয়েছে নি:ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তেমন মানুষকেও সচেতন হতে হবে। এজন্যও বিজিবি স্থানীয় সীমান্তবাসীকে সচেতন করে তোলার কাজ করছে বলে জানান তিনি।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ড.কেএম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, স্থানীয় বাসিন্দাদের সচেদন করে তুলতে লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিধি মানতে এলাকার মানুষদের অনুরোধ করা হচ্ছে। এছাড়াও যারা মাস্ক ব্যবহার করেন না তাদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এখন যারা সরকারি বিধি নিষেধ মানবেনা, অযথা ঘোরাফেরা করবেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে, প্রয়োজনে জেল জরিমানাসহ কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নূর কুতুবুল আলম, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার রায়, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম স্বপন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্প কর্মকর্তা ডাঃ ফিরোজ জামান জুয়েলসহ জেলা করোনা কমিটির সদস্যগণ।