বিকাশ ঘোষ,বীরগঞ্জ(দিনাজপুর) প্রতিনিধি : দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলা পলাশবাড়ী ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী ঢেমঢামিয়া কালীর মেলায় সাময়িক প্রস্তুতি নেয়া হলেও অনুমতি না থাকায় মেলার সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। মেলা পরিচালনার কোন রকমের অনুমতিপত্র না থাকার কারনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আব্দুল কাদের সরেজমিনে পলাশবাড়ী ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী ঢেমঢেমিয়া কালীর মেলা এলাকায় গিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মহিষ, ঘোড়ার ব্যবসায়ী সহ অবৈধ মেলায় আগত রকমারি ব্যবসা,দোকান, অস্থায়ী হোটেলগুলোকে সরিয়ে নিয়ে যেতে বলেন। পরবর্তীতে জোরদারদের নিকট হতে নগদ মূল্যে জায়গা ভাড়া নিয়ে উক্ত এলাকাজুড়ে করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি না মেনে অসাস্থকর পরিবেশে মহিষের অবৈধ হাট বসিয়ে ও লোকসমাগম করা হলে ১২ নভেম্বর সকাল ১০ টা হতে ১৫ নভেম্বর বিকেল ৫ টা পর্যন্ত মেলার আশপাশের ২৩০ গজ এলাকায় ফৌজদারী কায্যবিধি ১৪৪ ধারা জারি করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো: আব্দুল কাদের এবং এরই পরিপ্রেক্ষিতে পলাশবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যানকে মাইকিং এর মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার – প্রচারণা অব্যাহত রাখার নির্দেশ প্রদান করেন। উল্লেখ্য যে, কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে বীরগঞ্জের ১৪৬ বছরের ঐতিহ্যবাহী ঢেমঢেমিয়া কালিমেলা। উত্তরবঙ্গের সনাতন ধর্মের লাখ লাখ মানুষের বার্ষিক বিনোদনের একমাত্র ঐতিহ্যবাহী মৌসুমী বিনোদনসহ গণমানুষের মিলনমেলা হিসেবে দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার ঢেমঢেমিয়া কালির মেলা সর্বাধিক প্রশংসিত,প্রসিদ্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ স্থান এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।
উপজেলার পলাশবাড়ী ইউনিয়নের বৈরবাড়ী, চাপাপাড়া ও হিরামণি মৌজায় এ মেলার অবস্থান। বাংলা ১২৮০ সাল থেকে ঢেমঢেমিয়া কালিমেলা পল্লী বিনোদনের ঠিকানা। প্রতি বছর কার্তিক মাসের আমাবশ্যায় সনাতন ধর্মালম্বীদের শ্যামা পূজায় এ মেলার আয়োজন করা হয়।
কালিমন্দিরটি তার নিজস্ব ১ একর জমিতে একটি উচ্চ অট্টালিকা। পাশেই মাত্র কয়েক গজ পশ্চিমে দরবেশ মিরাজুন মিয়ার মাজার শরীফ রয়েছে।
বছর দু’য়েক আগে মেলার সময়ে বিশাল এই আয়োজনকে প্রাণভরে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল গোত্রের মানুষেরা এখানে এসে মেলা উপভোগ করত।
পশ্চিমে ঠাকুরগাঁও, উত্তরে পঞ্চগড়, পূর্বে নীলফামারী ও দক্ষিণে দিনাজপুর। ভাল যোগাযোগ ব্যবস্থা ও কয়েকটি জেলার মধ্যস্থল হওয়ায় কালিমেলা উদ্বোধনের আগে থেকেই মানুষের মাঝে সাজ সাজ রব পড়ে যেত। কালি পাটে উঠবে এ মর্মে অনেক আগে থেকেই সোরগোল চলতে থাকত গরু-মহিষ ও ঘোড়া কেনা-বেচা হত প্রায় অর্ধশতাধিক ইভেন্টে। আর কালি পাটে উঠার পর সে আলোকে আশাবাদী দর্শকেরা মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় প্রহর গুনতে থাকত। মেলায় গ্রামের জনগণের মনের খোরাক অফুরন্ত বিনোদনের জন্য যাত্রাপালা, পুতুল নাচ, সার্কাসসহ বিভিন্ন ইভেন্ট ও ডিজিটাল সময়ের ভ্যারাইটি, ম্যাজিক ‘শো’ সম্বলিত, ঘরের সৌন্দয্য বৃদ্ধিকারী বিভিন্ন ডিজাইনের আসবাবপত্র, পোষাক ও বিভিন্ন রকমের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছাড়াও নানা উপকরণে ভরপুর থাকতো।
বছরে একটি মাস প্রত্যন্ত পল্লীর মানুষের বিনোদনের এক অপূর্ব আয়োজন ও অতীত ইতিহাস হিসেবে দেশের উত্তরবঙ্গে ঢেমঢেমিয়া কালিমেলা স্বাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে থাকলেও বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির কারনে অনুমতিপত্র না থাকা সত্বেও এবছরে কালীমেলায় সরিজমিনে দেখা যায় বেচাকেনার উদ্দেশ্যে কয়েকটি ইভেন্টে গত সোমবার থেকে আসা মহিষ, ঘোড়া ব্যবসায়ী এবং হাতে গোনা কয়েকটি খাবারের দোকান সহ খেলনার দোকান ও ১০টির মত কসমেটিক দোকান দেখা যায়। এ ব্যাপারে কথা হলে নীলফামারী ডোমার থেকে আসা মহিষ বিক্রেতা জাহিরুল, ঠাকুরগাও রুহিয়ার ঘোড়া বিক্রেতা নাজমুল, প্রদীপ, তোফাজ্জল, জলিল সহ অনেকেই জানান, মেলার অনুমতিপত্র আছে কিনা সে সমন্ধে পূর্ব অবগতি না থাকায় পশু বিক্রি করতে এসে অনুমতি না পাওয়ায় নিজ এলাকায় ফিরে যেতে তাদের সবাইকে আর্থিকভাবে ব্যপক ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে।