পীরগঞ্জ প্রতিনিধি ঃ পুলিশের পক্ষপাত মুলক আচরণের কারণে ঠাকুরগাওয়ের পীরগঞ্জে ভুমিহীন পরিবারগুলোর উপর একের পর সন্ত্রাসী হামলা, ভাংচুড়, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটছে। এ সব ঘটনায় হামলাকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা নেয়নি। উল্টো প্রভাবশালীদের দিয়ে থানায় ভুমিহীনদের বিরুদ্ধে ৫টি মামলা করা হয়েছে। সোমবার বিকালে পীরগঞ্জ প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন ভুমিহীনরা। তবে পুলিশের বিরুদ্ধে আনা ঐ অভিযোগগুলি সত্য নয় বলে দাবি থানা কর্তৃপক্ষের।
পীরগঞ্জ উপজেলা ভুমিহীন সমন্বয় পরিষদের আয়োজনে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সভা প্রধান অবিনাশ চন্দ্র রায়। এতে অভিযোগ করা হয়, উপজেলার বৈরচুনা ইউনিয়নের বেলডাঙ্গী গ্রামে ২০১৮ সাল থেকে সরকারী খাস জমিতে বসবাস করে আসছে ৬ টি ভুমিহীন পরিবার। ঐ ভুমিহীনদের সেখান থেকে উচ্ছেদ করে সরকারী জমি দখল নিতে ভুমিহীনদের নানা ভাবে ভয়ভীতি দেখানো সহ তাদের বাড়িতে দফায় দফায় সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে ভাংচুড়, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালিয়ে আসছে ঐ ইউনিয়নের কুখ্যাত সন্ত্রাসী হযরত বাহিনীর লোকজন।
২০১৯ সালে রাতের অন্ধকারে হযরত বাহিনীর লোকজন ভুমিহীনদের বাড়ি ঘড় আগুন দিয়ে জ¦ালিয়ে দেয়। এ ঘটনায় ভুমিহীন আব্দুর রাজ্জাক থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। পরে আদালতে মামলা করেন তিনি।
চলতি বছরের ৭ জানুয়ারী হযরত বাহিনী লাঠি-সোটা, রাম দা, কুড়াল ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ভুমিহীনদের বাড়িতে হামলা চালায়। এ ঘটনায় ভুমিহীন রহিমা খাতুন বাদি হয়ে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করতে গেলে এবারো মামলা নেয়নি পুলিশ। পরে রহিমা আদালতে মামলা করেন।
গত ৩০ এপ্রিল রাতে ঐ হযরত বাহিনীর ৬০/৭০ জন দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিাত হয়ে ভুমিহীনদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে মারপিট করা সহ ঘড়ে আগুন দেয়। এ সময় ৯৯৯ এ ফোন করলে পাশ^বর্তী সেতাবগঞ্জ উপজেলার দমকল বাহিনীর সদস্যরা এসে আগুন নেভায়। এসয়য় ৯৯৯ এ পুলিশের সহযোগীতা চাওয়া হলে পীরগঞ্জ থানার সাথে যোগাযোগ করে দেয় কিন্তু থানা পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয়নি। ঘটনার পরদিন গত ১ মে সকালে ভুমিহীনরা থানায় আসার প্রস্তুতি নিয়ে হযরত বাহিনী অর্ধশতাধিক লোজ আবারো ভুমিহীনদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে মারপিট, ভাংচুড় করে লুটপাট চালায়। হামলাকারীদের হাত থেকে বাচতে ভুমিহীনরা একটি সেমিপাকা ঘড়ে অবস্থান নিয়ে তারা সে ঘড়ের দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে মারপিট করে এলাকায় ত্রস সৃষ্টি করে। তাদের হামলায় মহসিন নামে এক গ্রাম পুলিশ সহ কমপক্ষে ১০ আহত হয়। এদের মধে ৩ জন এখনো দিনাজপুরে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আশংকা জনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হামলাকারীরা যাওয়ার সময় ভুমিহীনদের ২টি গরু ও ২টি ছাগল নিয়ে যায়।
এ সময় ৯৯৯ এ ফোন করে পুলিশের সহযোগীতা চাওয়া হলে আবারো পীরগঞ্জ থানার সাথে যোগাযোগ করে দেওয়া হলেও স্থানীয় থানা পুলিশের কোন সহযোগীতা পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
হযরত বাহিনী প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেজাউল করিম বলেন, হযরত এবং তার লোকজনের বিরুদ্ধে জমি দখল, হামলা, মারপিট, বাড়িতে আগুন দেওয়া, মাদক সহ নানা ধরণের অভিযোগ আছে। তিনি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে বলেছেন বলে জানান।
পীরগঞ্জ থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলি সত্য নয়। ভুমিহীনদের বিরুদ্ধেই থানায় মামলা আছে। তাছাড়া হযরতের বিরুদ্ধেও থানায় মামলা করা হয়েছে। আসামীদের গ্রেফতার করতে পুলিশের পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত আছে।