আশরাফুল ইসলাম, তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি
পটাশসহ রাসায়নিক সারের সংকটে ক্ষুদ্র চা চাষিরা। তেঁতুলিয়া উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের হাট বাজারগুলোতে সার না পাওয়ার অভিযোগ কৃষকদের। অন্যদিকে সাধারন কৃষকও সারের সংকটে পড়েছেন। বিশেষ করে পটাশ সার পাওয়া যাচ্ছেনা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন প্রয়োজনের তুলনায় বরাদ্দ কম পাওয়ার কারণে এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
চলতি সময়ে চায়ের মৌসুম চলছে। এসময় চা চাষিরা চা বাগানে প্রয়োগ করে করছেন বিভিন্ন সার। অন্যদিকে কৃষকরা পাট, বাদাম,তিল, ভুট্টাসহ নানা রকম অর্থকরী ফসলে সার প্রয়োগ করছেন। এছাড়া জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাস আমন ধান রোপনের সময়। আমন ধানের বীজ তলা উৎপাদনের জন্যও সারের প্রয়োজন । কিন্তু তারা প্রয়োজনীয় সার পাচ্ছেন না। এই সুযোগে সার ব্যবসায়িরা বেশী দামে সার বিক্রি করছেন। ফলে চাষিদের মাঝে হতাশা দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন সঠিক সময়ে সার প্রয়োগ করতে না পারলে চায়ের উৎপাদন কমে যাবে।
উপজেলার সদর ইউপির তেলিপাড়া গ্রামের ক্ষুদ্র চা চাষি হাবিব জানান, বাজারের কোন দোকানে ঘুরে সার পাইনি। সবচেয়ে পটাশ সার খুব সংকট। এই সময় চা বাগানে সার দিতে না পারলে পাতা হবেনা । ফলে আমরা চা চাষিরা লোকসানে পড়ব।
আজিজনগর মন্ডল টি গার্ডেনের মালিক মোখলেসুর রহমান জানান, শারিয়ালজোত ও কানকাটা গ্রামের কয়েকজন কৃষক জানান, গত এক মাস ধরেই পটাশসহ সার না পাওয়ার কারণে চাবাগান, পাট, ভুট্টা আবাদে সার দিতে পাচ্ছি না। যার কারণে কাংখিত ফসল আবাদে সমস্যা হচ্ছে।
উপজেলায় এবার পাটের আবাদ হচ্ছে ৯শ ৭০ হেক্টর জমিতে। এছাড়া ভুট্টা ১ হাজার ৪শ ১০ হেক্টর. বাদাম ৫৫ হেক্টর জমিসহ বেশ কিছু অর্থকরী ফসলের চাষাবাদ হয়েছে।
বিসিআইসি ও বিএডিসির নির্ধারিত সার ডিলাররা বলছেন, উত্তরাঞ্চলের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় কৃষি আবাদ বেড়ে গেছে । প্রতিনিয়ত বাড়ছে চায়ের আবাদ । ফলে সারের চাহিদা বাড়ছে। সেই তুলনায় এই জেলায় সারের বরাদ্দ কম।
উপজেলার ভজনপুর এলাকার সার ডিলার রফিকুল ইসলাম জানান, চা বাগান এবং কৃষি আবাদে যে পরিমান সারের প্রয়োজন আমরা তা পাচ্ছিনা । ফলে কৃষক সার পাচ্ছেনা । এই জেলায় আরও সারের বরাদ্দ প্রয়োজন ।
বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে পঞ্চগড় জেলায় নিবন্ধিত ক্ষুদ্র চা বাগান রয়েছে ১ হাজার ১ শ ৬৮ টি। অনিবন্ধিত চা বাগান রয়েছে ৬ হাজার। ৭ হাজার ২ শ ৮৩ একর জমিতে এই চায়ের আবাদ করা হয়েছে। জেলায় শুধুমাত্র চা চাষের জন্য বছরে ৪ হাজার মেট্রিকটন সারের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু এই চা বাগানের বিপরিতে বিসিআইসি ইউরিয়া ৩শ মেট্রিক টন এবং বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশান (বিএডিসি) এবং বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিস কর্পোরেশান (বিসিআইসি) টিএসপি ১’শ মেট্রিক টন ও ডিএপি ২’শ মেট্রিক টন মোট ৬’শ মেট্রিক টন সার বরাদ্দ দিয়েছে। তাই চা চাষিরা প্রয়োজনীয় সার পাচ্ছেন না।
বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শামীম আল মামুন জানান, আমাদের গবেষণা মতে এই জেলায় চা চাষের জন্য বছরে ৪ হাজার মেট্রিক টন সারের প্রয়োজন রয়েছে। ক্ষুদ্র চা চাষিরা আরও সার বেশি ব্যবহার করেন । সেই তুলনায় আরও বেশি প্রয়োজন।
এদিকে বাজারের কোন সারের সংকট নেই বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম। তিনি জানান, সারের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আশা করছি এ মাসের মধ্যেই ডিলারদের মাধ্যমে কৃষকরা সার পেয়ে যাবেন। তাই সার সংকটের প্রশ্নই আসে না।