বিকাশ ঘোষ বীরগঞ্জ(দিনাজপুর)প্রতিনিধিঃ শিশুশ্রম মুক্ত বিশ্ব গড়ার প্রত্যয় নিয়ে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী বিশ্ব শিশু শ্রম প্রতিরোধ দিবস -২০২২ পালিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় দিনাজপুরের বীরগঞ্জে দিবসটি পালিত হয়েছে। রবিবার ( ১২ জুন-২০২২) সকালে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ, বীগঞ্জ এপি ও সুজালপুর ইউনিয়ন পরিষদের যৌথ আয়োজনে বীরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের হলরুমে দিবসটি পালিত হয়। এসময় সুজালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম মাস্টার, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ বীরগঞ্জ এপির প্রোগ্রাম অফিসার সতীশ চন্দ্র রায়,চাইল্ড প্রোটেকশন অফিসার মিঃ গোল্ডেন সরকার সহ ইউপি সদস্যবৃন্দ, ভিডিসি সদস্য, শিশু ফোরাম সদস্য, সংস্থার প্রোগ্রাম অফিসার, চাইল্ড প্রোটেকশন অফিসারগণ উপস্থিত ছিলেন।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা ১৯৯২ সালে প্রথম বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় প্রতিপাদ্যটির বাংলা নির্ধারণ করেছে ’ সামাজিক সুরক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করি, শিশুশ্রম বন্ধ করি’। প্রতিপাদ্যটিতে শিশুশ্রম বন্ধ করার মাধ্যমে শিশুর সার্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষার প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
সুজালপুর ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম তাঁর বক্তব্যে বলেন “ শিশুদের পড়ালেখার মাধ্যমে শিক্ষিত করা ছাড়া কোন বিকল্প নেই। আজকের শিশুই আগামী দিনে নেতৃত্ব দেবে। তাই আসুন সবাই অঙ্গীকার করে শিশু শ্রমকে ”না” বলি।
প্রোগ্রাম অফিসার সতীশ চন্দ্র রায় বলেন, কোভিড-১৯ এর প্রভাবে বিপুল সংখ্যক শিশু নতুনভাবে শিশুশ্রমের ঝুঁকিতে রয়েছে। কোভিড বাস্তবতায় ঝুঁকির মুখে থাকা পরিবারগুলোতে বড়দের কাজ হারানো বা আয় কমে যাওয়ার কারণে শিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিযুক্ত হতে বাধ্য হচ্ছে। বাংলাদেশে শিশুশ্রমের ব্যপক ব্যাপ্তি ঘটেছে । ২০১৩ সালের শিশুশ্রম জরিপ অনুসারে বাংলাদেশে শ্রমজীবী শিশুর সংখ্যা ১৭ লাখ ; যার মধ্যে ১২ লাখের বেশী শিশু বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত; যার মধ্যে আছে আছে লবণ, শুটকি, বিড়ি কারখানা, ইটভাটা, ওয়েল্ডিংসহ নানা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। এসব শিশু জীবিকার প্রয়োজনে শিশুশ্রমে যুক্ত হবার কারণে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষা, বিশ্রাম, খেলাধূলা ও বিনোদনের অধিকার থেকে। অনেক সময় তারা পাচার, নির্যাতন এবং সহিংসতারও সম্মুখীন হচ্ছে।
চাইল্ড প্রোটেকশন অফিসার মিঃ গোল্ডেন সরকার বলেন, বিপজ্জনক শিশুশ্রমের উপস্থিতি বেশিরভাগই দেখা যায় ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বড় বড় শহরগুলোতে। অন্যদিকে বেশিরভাগ কর্মজীবী শিশুর (৯৪.৮৫%) উপস্থিতিই দেখা যায় অনানুষ্ঠানিক শ্রমবাজারে। আইএলও’র সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে শুধু রাজধানীতেই দেড়লাখ শিশু গৃহকর্মের সঙ্গে জড়িত। এছাড়াও যৌনশ্রমে নিয়োজিত হয়ে মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছে অনেক কন্যাশিশু। শিশুশ্রমের সঙ্গে জড়িত শিশুরা বঞ্চিত হচ্ছে তাদের মৌলিক অধিকার থেকে এবং তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। যদিও কোভিড পূববর্তী দশকে শিশুশ্রম নিরসনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করছিল বাংলাদেশ, কিন্তু কোভিড বাস্তবতায় আবারও পিছিয়ে পড়েছি আমরা ।
শিশুশ্রমের ভয়াবহতার বিষয়টি অনুধাবন করে শিশুশ্রম মুক্ত সমাজগঠনে ওয়ার্ল্ড ভিশন বদ্ধ পরিকর। তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে একাত্ম হয়ে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ এবছরও বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা ও কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস উদযাপন করছে।