বিরল (দিনাজপুর) প্রতিনিধি ঃ দিনাজপুরের বিরলে হামেরা দিনাজপুরিয়া সংগঠনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো আদিবাংলার গ্রামীণ সংস্কৃতির তুমুড়ীবান ও পাতা (সাপ) খেলা।
দর্শক প্রিয় ও দুঃসাহসী তন্ত্র-মন্ত্রের এ খেলাটি অনুষ্ঠিত হয় বৃহস্পতিবার বিকালে উপজেলার রাণীপুকুর ইউপি’র বিষ্ণুপুর লোহাডাঙ্গা গ্রামের আদিবাসী তুড়ী পল্লীতে। খেলাটিকে ঘিরে লক্ষ করা গেছে শত শত নারী পুরুষ ও শিশু দর্শকের উপচে পড়া ভীড় । বিকাল হতে হতে তাপদাহ অপেক্ষা করে তান্ত্রিক ও দর্শকেরা মাঠের চারিদিকে ভীড় করতে থাকে। এরপর ২০১ টাকা নির্ধারিত মাঠ ফি দিয়ে মাঠের চার কোনে সহযোগী তান্ত্রিকদের সাথে নিয়ে আসন গেড়ে বসেন, তান্ত্রিক সুমন চন্দ্র শীল, আলমগীর হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, আব্দুল আলিম, সুজন ও কার্তিক। এর আগে মাঠের মাঝ খানে খেলা পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে খেলার প্রচলিত রীতি অনুযায়ী মাঠের মাঝখানে ঘোঠ বা একটি কলাগাছ বসানো হয়। একটি কুচু পাতার উপরে দুধ রেখে কলা গাছে উপরে ছেড়ে দেয়া হয় ৫টি বিষধর সাপ। সাপ ছেড়ে দিয়ে খেলা পরিচালনা করতে থাকেন, কমিটির পক্ষথেকে আরেক তান্ত্রিক তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ সাথী সরকার। এরপর তান্ত্রিকেরা বিভিন্ন নিরগুন বা তন্ত্র-মন্ত্রের বলে সাপকে তাদের কাছে টানতে থাকেন। পুরো ১ ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে তন্ত্র-মন্ত্রের বলে ১টি গোখরা সাপ নিজের কাছে নিয়ে এসে বস করেন, তান্ত্রিক সুমন চন্দ্র শীল। খেলা শেষে বিজয়ী তান্ত্রিক সুমন চন্দ্র শীলসহ খেলায় অংশগ্রহনকারী সকল তান্ত্রিকগণকে হামেরা দিনাজপুরিয়া সংগঠনের পক্ষ থেকে পুরুস্কার প্রদান করা হয়। এদিকে বিলুপ্ত প্রায় খেলাটির খবর পেয়ে ক্যামেরাবন্দী করতে ঢাকা থেকে ছুটে আসেন, বাংলা একাডেমির সহকারী পরিচালক ড. আমিনুর রহমান সুলতান। তার সাথে উপন্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ জাতীয় চারণ কবি সংঘের সহ-সভাপতি কবিয়াল নির্মল চন্দ্র সরকার। এব্যাপারে হামেরা দিনাজপুরিয়া সংগঠনের সভাপতি এম, এ কুদ্দুস সরকার বলেন, তন্ত্র-মন্ত্রের এ তুমুড়ীবান ও পাতা বা সাপ খেলাটি আদিবাংলার একটি গ্রামীণ সংস্কৃতি। আধুনিক যুগেও এখানকার আদিবাসী তুড়ী সম্প্রদায়ের মানুষেরা আদি ঐতিহ্যগত ভাবে এ খেলাটি ধরে আছে। স্থানীয় মনসা পুজা কমিটির সাবেক সভাপতি বীরেন সিং জানান, এই খেলাটি আমাদের অনেক দিনের পুরোনো খেলা। বাপ-দাদার আমল থেকেই এই খেলাটি আমরা মনসা পুজার পরের দিন করে থাকি। খেলা দেখতে আসা নতুন প্রজন্মের অনেকে জানিয়েছে তাদের অভিব্যাক্তি। বিনোদন ও দর্শক প্রিয় এ খেলাটি কালের আবর্তনে যেন হারিয়ে না যায় এমন প্রত্যাশা দর্শক ও আয়োজকদের।