বিরল (দিনাজপুর) প্রতিনিধি ঃ দিনাজপুরের বিরলে আদিবাসী কোরা পল্লীতে কারাম উৎসব উদযাপিত হয়েছে।
প্রতিবারের ন্যায় ভাদ্রমাসের পূর্ণিমা তিথিতে শুক্রবার রাতে উপজেলার রাণীপুকুর ইউপি’র হালজায় ঝিনাইকুড়ি আদিবাসী কোরা পল্লীতে এ কারাম উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। কারামপুজা মন্ডপের সভাপতি মাহাতো জগেন কোরা জানান, পুঁজার রীতি নীতির কথ। তার ভাষায় এক সময়কার মহা মানব কারাম ও ধারামের ঊদ্দেশ্যে এ পুজা বা উৎসব প্রতি বছর ভাদ্র মাসের পূর্ণিমা তিথিতে তারা করে থাকেন। পুঁজার সময় ঘনিয়ে আসলেই ৫ দিন আগে থেকেই সবাইকে নিরামিষ ভোজী হতে হয়। পুঁজার ১ দিন আগে থেকে একেবারেই উপোস থাকতে হয়। পরের দিন বিসর্জন না দেয়া পর্যন্ত। মহিলা পারবেত অর্থাৎ ভক্তদের চলে যেতে হয় নিজ নিজ ভাইয়ের বাড়ীতে, কিন্তু এদের সংখ্যা কম থাকায় সকলের ভাইয়ের বাড়ী কপালে জুটেনা। স্বামীর বাড়ীতেই স্বামীর কাছ থেকে বিরত থেকে অনেকে এ নিয়ম পালন করে। এ পুঁজার জন্য একটি খিল কদমের গাছ বা ডাল মাটিতে স্থাপন করে পুঁজা মন্ডপ তৈরী করতে হয়। খিল কদম্বের গাছ বা ডাল কেন লাগে এ সর্ম্পকে জানতে চাওয়া হলে তারা জানায়, ভগবান শ্রী কৃষ্ণ এই কদম্ব গাছের ডালে বসেই তার বাঁশী বাজিয়েছিলেন বলেই এ গাছের প্রয়োজন হয়। এছাড়া ৫ দিন আগে থেকেই ডালীতে গোজানো মাস কলাইয়ের চারা, তেল ছাকোয়া পিঠো অর্থাৎ তেল পিঠা, ধুপ, ২টি মোরগ, দুধ, ঘি, তেল, সাদা সুতা, সিঁদুর, কাজল, জল, ফুল সহ নিজ হাতে তৈরী করা নেশা জাতীয় দ্রব্য হাড়িয়া ও সামান্য গাঁজারও দরকার হয় পুাঁজার সময়। কেন এগুলির প্রয়োজন হয় এ সর্ম্পকে জানতে চাওয়া হলে প্রতিটির বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয় তারা। পুঁজা শুরু হলে মন্ডপ ঘিরে সকল মহিলা ভক্তরা নতুন কাপড় পরে ডালা সাজিয়ে বসে পড়ে মাটির উপর, আর পুরুষ ভক্তরা মাদল ডিগা সহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে মন্ডপ স্থল মুখরিত করে তুললে মাহাতো অর্থাৎ মহৎ ব্যাক্তিটি মহা মানব কারাম-ধারাম এই ২ ভাইয়ের মুখস্ত জীবনী উপস্থিত ভোক্তদের শোনাতে থাকে এবং কথার ফাকে ফাকে মহিলা ভক্তরা ফুল, ধান গাছের পাতা মন্ডপের উপর নিক্ষেপ করতে থাকে। জীবনী শেষ হতেই মোরগ ২ টি মন্ডপস্থলে নিয়ে এসে হাড়িয়া দিয়ে মাখানো আতব চাল মোরগ ২টি কে খেতে দেয়া হয়। তারা জানায়, পুঁজায় কোন রকম ভুল হলে মোরগ ২টি কোন কিছুই খাবেনা এবং মাস কলাইয়ের চারা গুলিও গজাবেনা মরে যাবে। চাল খাওয়ানোর পর্ব শেষ হলে মোরগ ২টির মাথা একটানে ছিড়ে আগুনে পুড়ে সকলে একটু একটু করে খেয়ে চুয়ানী বা হড়িয়া খেয়ে বিভর হয়ে উঠে। তার পর শুরু হয় আনন্দ উল্ল্যাস ও নাচ গান। প্রবীণ শিল্পি সুনিয়া কোরা তাদের খাষায় গেয়ে উঠে ”খোঁচ লাগাল স্যাড়িয়া, মহা সুন্দর গেলিয়া, গেল হেন্নু হে- দেনাজপুর মে হ্যাঁটিয়া। প্রায় ঘন্টা খনেক নাচ-গান চলার পর মহিলা ভোক্তরা নিজ নিজ ভাইয়ের বাড়ীতে গিয়ে দুধ, শরবত জাতীয় খাবার আগে ভাইকে খাওয়াইয়ে তার পর তারা নিজে খেয়ে আবার এসে নাচ-গান শুরু করে। নাচ-গান চলে ভোর রাত পর্যন্ত।