খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ ধানের খেতে পোকা দমনে কীটনাশকের পরিবর্তে পার্চিং পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার কৃষকদের মাঝে। ধানের খেতে গাছের ডাল, খুঁটি, বাঁশের কঞ্চি ও ধইঞ্চার ডাল পোতা হয়। বিভিন্ন প্রজাতির পাখিরা এসবের ওপর বসে ফসলের ক্ষতিকারক পোকামাকড় খেয়ে ফেলে। এ পদ্ধতিকেই ‘পার্চিং’ বলা হয়।
উপজেলা কৃষি স¤প্রসারণ অফিস স‚ত্রে জানা গেছে, এবার ১৩ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষাবাদ হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমিতে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করছেন কৃষকরা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ধানখেতের মধ্যে ১৫ থেকে ২০ হাত দ‚রে দ‚রে গাছের ডাল কিংবা ধইঞ্চা ডাল পোঁতা। সেখানে কিছুক্ষণ পরপর উড়ে এসে বসছে শালিক, ফিঙে, বুলবুলিসহ নানা জাতের পাখি। একটু পরপর ডাল থেকে ধানগাছের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে পাখিগুলো আর পোকা ধরে খাচ্ছে। যে জমিতে পোকা বেশি, সেই জমিতে পাখির আনাগোনাও বেশি দেখা যাচ্ছে।
গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক এনামুল ইসলাম জানান, বিভিন্ন ধরনের পোকা খাদক পাখি যেমন-শালিক, বুলবুলি, ফিঙ্গে পার্চিংয়ের ওপরে বসে। সেখান থেকে উড়ে গিয়ে ক্ষতিকারক পোকা ও পোকার ডিম খেয়ে ফেলে। এর ফলে কীটনাশক ছাড়াই পোকার আক্রমণ থেকে ধানগাছগুলো রক্ষা পাচ্ছে। আরেক কৃষক মোসলেম উদ্দিন বলেন, ক্ষতিকর পোকামাকড় চুপচাপ বসে রস চুষে খায় বা ফসল কেটে বা কুরে কুরে খায়। পাখিরা যেন সহজেই ক্ষতিকর পোকামাকড়গুলো দেখতে পায় এবং ধরতে পারে সে জন্যই একটু ঘন ঘন পার্চিং দেওয়া হয়। কৃষিবান্ধব এ প্রযুক্তি ক্ষতিকারক পোকার আক্রমণ থেকে ধান ক্ষেত রক্ষায় আমাদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বাসুদেব রায় জানান, এ পদ্ধতি বালাইনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পরিবেশকে দ‚ষণমুক্ত রাখতে ভ‚মিকা রাখছে। সেই সঙ্গে জমিতে জৈব সার হিসেবে পাখির বিষ্ঠা পড়ে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপজেলাতে ধান চাষে কয়েক বছর ধরে পার্চিং পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই পদ্ধতিতে ফসলি জমিতে পুতে রাখা ডালগুলোর ওপর পাখি বসে ফসলের জন্য ক্ষতিকারক পোকা খেয়ে ফেলার ফলে আর কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না। যার ফলে কম খরচে অধিক ফলন পাওয়া যায়।