হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যে দিয়ে মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৩ পালিত হয়েছে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার সূর্যোদয়ের সাথে সাথে প্রশাসনিক ভবনের সম্মুখে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতভাবে উত্তোলন করা হয়। সকাল ৮.১৫ মিনিটে মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এম. কামরুজ্জামান প্রশাসনিক ভবনের সম্মুখে স্থাপিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রক্টর প্রফেসর ড. মো. মামুনুর রশীদ, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক প্রফেসর ড. ইমরান পারভেজ। এরপর মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর মহোদয়ের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কালো ব্যাচ ধারণ করেন। কালো ব্যাচ ধারণ শেষে মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এম. কামরুজ্জামান এর নেতৃত্বে ২১ ফেব্রুয়ারি ও আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে প্রভাত ফেরি পুরো ক্যাম্পাস ও এর সামনের মহাসড়ক প্রদক্ষিণ করে। উক্ত প্রভাত ফেরিতে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এম. কামরুজ্জামান ২১ ফেব্রæয়ারি শহিদদের বিদেহী আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করেন। ক্রমান্বয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করেন ডিনগণ, শিক্ষকদের বিভিন্ন সংগঠন, কর্মকর্তাদের সংগঠন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (হাবিপ্রবি শাখা)-এর নেতৃবৃন্দ, কর্মচারীসহ বিশ^বিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
এরপর শহিদ মিনার প্রাঙ্গনে মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর এর বাণী বিতরণ করা হয়। বাণীতে মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর বলেন, ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রæয়ারি আজকের এই দিনে এ দেশের ছাত্রজনতা বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদার দাবিতে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন রাজপথে। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর নেতৃত্বে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবীতে সর্বপ্রথম অবস্থান ধর্মঘটের মাধ্যমে যে আন্দোলনের সূচনা তার পূর্নতা প্রাপ্তি ঘটে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রæয়ারি ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে। আমি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি ভাষাশহীদ রফিক, শফিক, বরকত, ছালাম,জব্বারদের প্রতি যাঁরা মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পাকিস্তানী শাসকদের বুলেটে ঢাকার রাজপথে আত্মদান করেছিলেন। বিন¤্র চিত্তে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি ভাষা আন্দোলনের অন্যতম রূপকার স্বাধীনতার মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে যিনি সারা জীবন বাংলা ভাষা ও বাঙালির অধিকার ও মর্যাদা রক্ষার সংগ্রাম করেছেন। শ্রদ্ধার সাথে আরও স্মরণ করছি জীবিত ও প্রয়াত ভাষা সৈনিকদের প্রতি যাঁরা বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার বিভিন্ন আন্দোলন, সংগ্রাম ও কারাবরণ করেছিলেন এবং আজও বাংলা ভাষার জন্য স্ব স্ব অবস্থানে থেকে বিভিন্নভাবে অবদান রেখে চলেছেন। একুশে ফেব্রæয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, বাঙালির গৌরব ও গর্বের একুশে ফেব্রæয়ারি এখন পৃথিবীর সকল জাতি গোষ্ঠীর মাতৃ ভাষার অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার দিন হিসেবে স্বীকৃত। বিশ্ববাসীর কাছে একুশ এখন ন্যায় সঙ্গত অধিকার আদায়ের প্রেরণার উৎস- আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
পরবর্তীতে ৯.৪০ মিনিটে টিএসসি প্রাঙ্গণে শিশুদের চিত্রাঙ্কন (শহিদ মিনার ও ভাষা আন্দোলনের উপর) প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে “ভাষা আন্দোলন ও আমাদের স্বাধীনতা” শীর্ষক স্বহস্তে লিখিত রচনা প্রতিযোগিতা এবং ”আবৃত্তি ও দেশাতœবোধক গানের” প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। সকাল ১১.৩০ মিনিটে সকল প্রতিযোগিতাসমূহের বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
বাদ জোহর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ভাষা শহিদ ও সকল শহিদগণের আতœার মাগফিরাত কামনা করে কেন্দ্রীয় মসজিদে বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।