বিকাশ ঘোষ, বীরগঞ্জ(দিনাজপুর)প্রতিনিধি: দিনাজপুরের বীরগঞ্জে এক সমিতির নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। লাখ লাখ টাকা হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া দিনমজুর ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। উপজেলার ডাঙ্গারহাট এলাকার ভবানীপুরহাট যুবকল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান,ভবানীপুরহাট যুব কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতির রেজিষ্ট্রেশন নং-১৫৭ এর কার্যক্রম ১৫/১/ ২০০৭ সালে গঠন করা হয়। সমিতির কার্যক্রমসমৃহ সদস্যদের নিকট শেয়ার ও সঞ্চয় আমানত সংগ্রহের মাধ্যমে মূলধন ফেরতযোগ্যের কথা থাকলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। সদস্যদের জমা রাখা টাকা দ্বিগুণ করে ৮৩৭ সদস্যের নিকট প্রতি মাসে ১০০ টাকা করে সঞ্চয় নেওয়া হতো। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে জমানো টাকা ফেরত দেওয়ার সময় হলে সমিতির লোকজন রাতারাতি ডাঙ্গারহাট চান্দিনার কার্যালয়ের সাইনবোর্ডে খুলে নিয়ে উধাও হয়ে যান। খবর পেয়ে সদস্যরা উক্ত কার্যালয় ঘেরাও করলেও কোনো প্রতিকার পায়নি। সমিতির সদস্য জহিরুল হক জানান,প্রত্যেক সদস্য ৭ থেকে ১৫ হাজার টাকা করে জমা করেছিলেন। মোছা: শেফালী বেগম জানান, আমার ২০ হাজার টাকা ফেরত আজ দেবে, কাল দেবে বলে ঘুরানো হচ্ছে। টাকা চাইলে অপমান করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মোছা: ঝরনা বেগম সহ কেউ কেউ একাধিক হিসাবে এক থেকে দেড় লাখ টাকাও জমা রেখেছেন। মরিচা ইউনিয়নের খামার খড়িকাদাম গ্রামের খগেন্দ্র বর্মন জানান, মেয়ের বিয়ের জন্য তিনি ১৬ হাজার টাকা জমা করেছিলেন। পরে দ্বিগুণ হিসাবে ৩২ হাজার টাকা চাইতে গেলে যুব কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি সাবেক ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম তাঁকে লাঞ্ছিত করে তারিয়ে দেন। একই এলাকার কাশেম আলীর স্ত্রী আনোয়ার বেগম জানান,সমিতিতে জমানো টাকা না পাওয়ায় তাঁর নাতনির বিয়ে ভেঙে গিয়েছে। যোগাযোগ করা হলে সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম দাবি করেন,তিনি দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করছেন না। সভাপতি নুরুল ইসলাম ও তাঁর শ্যালক সমিতির কোষাধ্যক্ষ ওয়াসিম রানা সব জানেন। এ বিষয়ে সভাপতি নুরুল ইসলামের সাথে কথা বলে জানা যায়, সমিতির সদস্যদের রক্ষিত টাকা দ্বিগুণ করার লক্ষে বৃক্ষ রোপণ করেন। সেই বৃক্ষ প্রায় ১৫ লাখ টাকা বিক্রির কথা স্বীকার করেন নুরুল ইসলাম। তিনি আরও জানান, সদস্যদের ২৪ লাখ সঞ্চয় উত্তোলন করা হয়েছে। কিছু টাকা সুপারভাইজার আবুল কাশেমের কাছে আছে। পরিস্থিতি শান্ত করতে সমিতির কার্যালয় বন্ধ রাখা হয়েছে। তিনি আরও জানান, সমিতির কয়েকজন সদস্য বীরগঞ্জ থানায় আমার বিরুদ্ধে লেখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। আপাত্ত গত ফেব্রুয়ারী মাসে ১৫ তারিখ থেকে সমিতির কার্যক্রম ও কার্যালয় বন্ধ রাখা হয়েছে। সমিতির সদস্যদের টাকা ফেরত পেতে সময় দিতে হবে। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা সমবায় কার্যালয়ের সহকারী পরিদর্শক ভূপতি চন্দ্র রায় জানান, দ্বিগুণ টাকা দেওয়ার কথা বলে সমিতির অর্থ জমা নেওয়ার কোনো আইন নেই। তাদের সাথে অনেকবার যোগাযোগ করেও যোগাযোগ হচ্ছে না। এব্যাপারে বীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুব্রত কুমার সরকার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান,উক্ত সমিতির বিষয়ে থানায় এসে দু’জন লেখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।