‘অন্তর্ভুক্তি মূলক সংগঠন গড়ি, নতুন সমাজ বিনির্মাণ করি’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের দিনাজপুর জেলা শাখার উদ্যোগে মহিলা পরিষদের ৫৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত।
৪ এপ্রিল (মঙ্গলবার) শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ দিনাজপুর জেলা শাখার উদ্যোগে মহিলা পরিষদের ৫৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে ভবিষ্যৎ নারী আন্দোলন সম্পর্কে তরুণ প্রজন্মের ভাবনা শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতির বক্তব্যে আলোচনা সভায় দিনাজপুর মহিলা পরিষদের সভাপতি কানিজ রহমান বলেন, ১৯৭০ থেকে ২০২৩ বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ৫৩ বছরে পদার্পণ করলো। মহিলা পরিষদ একটি স্বেচ্ছাসেবী নারী আন্দোলনমুখী সংগঠন। মহিলা পরিষদের জন্ম হয়েছিল পশ্চিম পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক-পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে দেশকে মুক্ত করার প্রস্তুতি পর্বের এক উত্তাল সময়ে। প্রতিষ্ঠালগ্নের সূচনাতেই তাই জেলবন্দীদের মুক্তির জন্য স্বাক্ষর সংগ্রহ, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন এবং ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য কাজ। স্বাধীন দেশে’৭২ সালে প্রথম সম্মেলনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ তার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে।
স্বাগত বক্তব্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ড. মারুফা বেগম বলেন, বৈশ্বিক আন্দোলনের নারীর আন্দোলনের পথ সহজ বা মসৃন ছিল না। বিভিন্ন অবস্থায় এর আছে সফলতা আছে ব্যর্থতাও। আছে অব্যাহত চ্যালেঞ্জ। বাড়ি কর্মক্ষেত্রে, অফিস-আদালত, পথে কাঠামোগত উন্নয়ন কাজে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে নারীর অবস্থান আজ দৃশ্যমান। কিন্তু যে চ্যালেঞ্জগুলোকে নারী আন্দোলনকে প্রতিহত করতে হয়েছে, হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে নারী ও কন্যার প্রতি অব্যাহত বহুমাত্রিক সহিসংসতা, নারীর অপ্রতুল প্রতিনিধিত্ব, সম্পদ সম্পত্তিতে অধিকারহীনতা, নারীর প্রতি সংবেদনশীলতার অভাব, গৎ বাধা প্রথা ও পিতৃতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং রাজনৈতিক অঙ্গীকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জোড় না দেয়া এবং দায়বদ্ধতার অভাব। এই সব বিবেচনায় মহিলা পরিষদ বিভিন্ন আইন সংস্কার আন্দোলন, অভিন্ন পারিবারিক আইনের দাবী, সহিংসতার শিকার নারী ও কন্যার জন্য সাময়িক আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন, সিডও সনদের অনুমোদন ও বাস্তবায়নের আন্দোলন, নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও নারীর জন্য বিনিয়োগ গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করে যাচ্ছে। কখনো এককভাবে কখনো যৌথভাবে সংগঠন ও নাগরিক সমাজের সাথে। কিন্তু এত কিছুর পরও বিগত ২-৫ বছরে নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতনের ঘটনা ও সংখ্যাবৃদ্ধি যেমন ভাববার বিষয়, তেমনি এই ভয়াবহ আচরণ এবং পাশবিকতার ধরন দেখে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায় না। এতদিনেও একটি বিজ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের কার্যকর উদ্যোগ আমরা নিতে পারিনি।
দিনাজপুর মহিলা পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক রুবিনা আকতার এর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সহ-সভাপতি মিনতি ঘোষ, মাহাবুবা খাতুন, অর্থ সম্পাদক রতœা মিত্র, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক রাজিয়া সুলতানা, আন্দোলন সম্পাদক গৌরী চক্রবর্তী, সদস্য রোকসানা বিলকিস, রেহেনা বেগম, শুকলা কুন্ডু, তামজিদা পারভীন সীমা, অনামিকা পান্ডে।
জাতীয় পতাকা ও সংগঠনের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ৫৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ দিনাজপুর জেলা শাখার সভাপতি কানিজ রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ড. মারুফা বেগম।
মঙ্গলবার , ৪ এপ্রিল ২০২৩ | ৩১শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
