মঙ্গলবার , ১৫ আগস্ট ২০২৩ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আটোয়ারীতে নানা কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে জাতীয় শোক দিবস পালন

প্রতিবেদক
ঠাকুরাগাঁও সংবাদ
আগস্ট ১৫, ২০২৩ ৪:০৬ অপরাহ্ণ

মনোজ রায় হিরু, আটোয়ারী (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি ঃ
পঞ্চগড়ের আটোয়ারীতে নানা কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে জাতীয় শোক দিবস ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাত বার্ষিকী পালন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৫ আগষ্ট) সকালে উপজেলা পরিষদে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু ম্যুরালে পুষ্প্য মাল্য অর্পনের মধ্যদিয়ে শোক দিবসের কর্মসূচী শুরু হয়। কর্মসূচীর মধ্যে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করণ, কালো ব্যাচ ধারন, কুইজ ও চিত্রাঙ্কনে বিজয়ীদের পুরস্কার বিতরণ, যুব লোনের চেক হন্তান্তর এবং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের উন্নত খাবার পরিবেশন সহ মন্দির-মসজিদে বিশেষ প্রার্থনার ব্যবস্থা উল্লেখযোগ্য। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: মুসফিকুল আলম হালিমের সভাপতিত্বে জাতীয় শোক দিবসের কর্মসুচীতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ তৌহিদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। অন্যান্যের মধ্যে সহকারী কমিশনার (ভূমি) শায়লা সাঈদ তন্বী, ভাইস চেয়ারম্যান রেনু একরাম, উপজেলা স্বাস্থ্য ও প: প: কর্মকর্তা ডাঃ মো: হুমায়ুন কবির, আটোয়ারী থানার ওসি মোঃ সোহেল রানা, উপজেলা কৃষি অফিসার মোছা: নুরজাহান খাতুন, ওসি (তদন্ত) মোঃ সোয়েল রানা, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো: এমদাদুল হক, সাবেক উপজেলা কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ নজরুল ইসলাম প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি উপজেলা আওয়ামীলীগ ও এর অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীবৃন্দ, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, আটোয়ারী থানা, স্বাস্থ্য বিভাগ, পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগ, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ, ফায়ার সার্ভিস, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ সরকারী-বেসরকারী দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত থেকে শোক দিবসের কর্মসূচীতে অংশগ্রহন করেন।
এদিকে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ তৌহিদুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক মোঃ এমদাদুল হকের নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ, মহিলা আওয়ামীলীগ, কৃষকলীগ, আওয়ামী যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ সহ অন্যান্য সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধু ম্যুরালে পুষ্প্য মাল্য অর্পন করেন। পরে শোক র‌্যালী বের করে উপজেলার প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে আটোয়ারী মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে শোক দিবসের আলোচনা সভায় মিলিত হয়। আলোচনা শেষে জাতির পিতা সহ তাঁর পরিবারের সদস্যদের স্মরণে বিশেষ মোনাজাত এবং তোবারক বিতরণের মধ্য দিয়ে কর্মসূচী শেষ হয়।
উল্লেখ্য, শোকাবহ ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। বাঙালি জাতির শোকের দিন। জাতির জনককে স্বপরিবারে নির্মম-নিষ্ঠুরভাবে হত্যার ৪৮ বছর। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্য ধানমন্ডির বাসভবনে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ হারিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশু শেখ রাসেল সহ পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল। পৃথিবীর এই জঘন্যতম হত্যাকান্ড থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর অনুজ শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত এবং তার ছেলে আরিফ ও সুকান্তবাবু, মেয়ে বেবি, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তসত্বা স্ত্রী আরজু মনি এবং আবদুল নাঈম খান রিন্টু ও কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য ও ঘনিষ্ঠজন। এ সময় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় তাঁরা প্রাণে রক্ষা পান।
মূলত, ৭৫ এর ১৫ আগস্ট থেকেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিপরীত ধারার যাত্রা শুরু হয়। বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করে সামরিক শাসনের অনাচারী ইতিহাস রচিত হতে থাকে। সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর গোটা বিশ্বে নেমে আসে তীব্র শোকের ছায়া এবং ছড়িয়ে পড়ে ঘৃণার বিষবাষ্প। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর নোবেল জয়ী পশ্চিম জার্মানির নেতা উইলি ব্রানডিট বলেন, মুজিবকে হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না। যে বাঙালি শেখ মুজিবকে হত্যা করতে পারে তারা যে কোনো জঘন্য কাজ করতে পারে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ও বিশিষ্ট সাহিত্যিক নীরদ সি চৌধুরী বাঙালিদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মুজিবকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি বিশ্বের মানুষের কাছে নিজেদের আত্মঘাতী চরিত্রই তুলে ধরেছে।
দ্য টাইমস অব লন্ডন এর ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট সংখ্যায় উল্লেখ করা হয় ‘সবকিছু সত্তে¡ও বঙ্গবন্ধুকে সবসময় স্মরণ করা হবে। কারণ, তাঁকে ছাড়া বাংলাদেশের বাস্তব কোনো অস্তিত্ব¡ নেই। একই দিন লন্ডন থেকে প্রকাশিত ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের লাখ লাখ লোক শেখ মুজিবের জঘন্য হত্যাকান্ডকে অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে বিবেচনা করবে।’ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক আহমেদ বিচারের হাত থেকে খুনিদের রক্ষা করতে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সকে আইন হিসেবে অনুমোদন করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সুদীর্ঘ একুশ বছর পর ক্ষমতায় এলে ১৯৯৬ সালের ১৪ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তিন প্রধান আসামী বরখাস্ত লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী তাহের উদ্দিন ঠাকুরকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই বছরের ২ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর একান্ত সহকারী (পিএ) এ এফ এম মোহিতুল ইসলাম পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সংঘটিত নারকীয় হত্যাকান্ডের ঘটনায় থানায় একটি এফআইআর করেন। ১৯৯৬ সালের ১৪ নভেম্বর খুনিদের বিচারের হাতে ন্যস্ত করতে পার্লামেন্টে ইনডেমনিটি আইন বাতিল করা হয়। ১৯৯৭ সালের ১৫ জানুয়ারি সিআইডি এই মামলায় ২০ জনকে অভিযুক্ত করে মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন এবং একই বছরের ১২ মার্চ ৬ আসামির উপস্থিতিতে আদালতে বিচার শুরু হয়। ১৯৯৭ সালের ১৯ জুন পর্যন্ত বিচারক বিব্রত হওয়া সহ স্বাধীনতা-বিরোধী চক্রের নানা বাধার কারণে ৮বার বিচার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়।
এভাবে দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর মামলার রায়ে বিচারক কাজী গোলাম রসুল ১৫ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে মৃত্যু দন্ড প্রদান করেন। অন্যদিকে, ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট বেঞ্চ ২৪ দিনের শুনানি শেষে বিভক্ত রায় দেন। বিচারক এম রুহুল আমিন অভিযুক্ত ১৫ আসামির মধ্যে ১০ জনের মৃত্যুদন্ডাদেশ বজায় রাখেন। কিন্তু অপর বিচারক এ বি এম খায়রুল হক অভিযুক্ত ১৫ জনকেই সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড দেন। পরবর্তীতে ২০০১ সালের অক্টোবরের সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এলে বিচার কাজ বন্ধ থাকে। দীর্ঘ ৬ বছর পর ২০০৭ সালের ২৩ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষের মুখ্য আইনজীবী বর্তমান সরকারের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সুপ্রিম কোর্টে সংক্ষিপ্ত বিবৃতি দেন এবং ২৩ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের ৩ সদস্যের একটি বেঞ্চ ২৭ দিনের শুনানি শেষে ৫ আসামিকে নিয়মিত আপিল করার অনুমতিদানের লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেন। ২০০৯ সালের ১২ নভেম্বর ২৯ দিনের শুনানির পর চূড়ান্ত আপিল শুনানি শেষ হয় এবং আদালত ১৯ নভেম্বর রায়ের তারিখ নির্ধারণ করেন। ওইদিন (১৯ নভেম্বর) বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ৫ সদস্যের বেঞ্চে হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রেখে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ৫ আসামির দায়ের করা আপিল আবেদন খারিজ করা হয়। ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের রিভিউ খারিজ হয়ে গেলে ২৮ জানুয়ারি ৫ আসামির ফাঁসির রায় কার্যকর করে জাতিকে দায়মুক্ত করা হয়। ২০২০ সালের ১২ এপ্রিল ভারতে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর আরও একজন খুনি আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যার ৪৫ বছর, নৃশংস ওই হত্যাকান্ডের মামলার ২৫ বছর এবং উচ্চ আদালতের রায়ে ৫ আসামির ফাঁসি কার্যকরের প্রায় ১০ বছর পর গ্রেপ্তার হয় খুনি মাজেদ।
তবে বিভিন্ন দেশে অন্যান্য খুনিরা পলাতক থাকায় বাকিদের সাজা এখনও কার্যকর হয়নি। অবিলম্বে বাকী খুনীদের সাজা কার্যকর করা হউক, জাতীয় শোক দিবসে এটাই হউক বাঙ্গালীর অঙ্গীকার। #

সর্বশেষ - ঠাকুরগাঁও

আপনার জন্য নির্বাচিত

বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ২০টি জরুরি নির্দেশনা

বড়পুকুরিয়া খনির নতুন ফেজে কাজ শুরু করতে কয়লা উত্তোলন সাময়িক বন্ধ

জাতীয়করণ ও শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠনের দাবিতে পঞ্চগড়ে শিক্ষকদের মানববন্ধন

বীরগঞ্জে ইউনিয়ন বিএনপির উদ্যোগে ইফতার মাহফিলে

চিরিরবন্দরে অজ্ঞাতনামা বৃদ্ধের মরদেহ উদ্ধার

কাবুল ছেড়েছে যুক্তরাজ্যের শেষ ফ্লাইট

ঠাকুরগাঁওয়ে সচেতনতার মাধ্যমে ডায়াবেটিসে মৃত্যুহার কমিয়ে আনতে হবে — রমেশ চন্দ্র সেন এমপি

পীরগঞ্জে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন আইন বিষয়ে অবহিত করণ সভা

দেবীগঞ্জে বাঁধ কেটে দেওয়ায় বিপাকে দ্বীপ মাঝিয়ালী চরের ১৭০পরিবার

ঠাকুরগাঁওয়ে সদর হাসপাতালের ২শতাধিক শিশু রোগীর মাঝে ফুল-ফল বিতরণ