বিরল (দিনাজপুর) প্রতিনিধি ঃ গাছের পাতা টাকা কেন হয় না। গানের এই কথাটির উত্তর দিয়ে মিথ্যা প্রমাণ করেছে ওমান ফেরত এক যুবক। ওই যুবক প্রতিনিয়িত গাছের পাতা বাজারে নিয়ে গিয়ে সংসার চালিয়েও অবশিষ্ঠ অর্থ জমা করে আসছে। বলছিলাম, দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ১ নং আজিমপুর ইউপি’র শ্যামপুর গ্রামের ইউসুফ আলীর পুত্র ওমান ফেরত যুবক হাবিবুর রহমান (২৬)-এর কথা।
বিদেশে কষ্টের জীবন সহ্য করতে না পেরে সে গত ২০১৮ সালে প্রথমের দিকে দেশে ফিরে রাজশাহীর পুটিয়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যায়। সেখানে গিয়ে দেখে, সেখানকার মানুষ পানের চাষ করে অনেক স্বাবলম্বী ও লাভবান হয়েছে। এরপর উদ্যোগ নিয়ে সেখান থেকে পানের চারা এবং শ্রমিক নিয়ে এসে বাড়ির পাশে প্রাথমিক ভাবে ১৮ শতাংশ জমিতে সে পানের চারা রোপন করে পান চাষ শুরু করে। সেখানেই ঘুরে যায় তার ভাগ্যের চাকা। এর পর তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দিন দিন স্বাবলম্বী হতে থাকে সে। ২০২২ সালে জমির পরিমান বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ এবং বর্তমানে ৩৫ শতাংশ জমিতে সে পানের আবাদ করে এলাকায় ব্যপক সাড়া ফেলেছে।
যুবক হাবিবুর রহমান জানায়, আমি ওমান দেশে ছিলাম। সেখানে খুবই কষ্ট। আমি সেখান থেকে দেশে ফিরে রাজশাহীর পুটিয়ায় এক আত্মীয়-এর বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে এই পান চাষে উদ্বুদ্ধ হই। প্রথমে এই পানের আবাদ করতে আমার খুবই কষ্ট হয়েছে। কারণ পান গাছের পরিচর্যা ও পান পাতা ছেঁড়ার জন্য রাজশাহী ও ফরিদপুর থেকে দক্ষ্য শ্রমিক নিয়ে আসতে হত। দুরবর্ত্তী হবার কারণে শ্রমিকরাও আমার কাছ থেকে বেশি বেশি টাকা নিত। কষ্ট হলেও আমি হাল ছাড়িনি। এখন আমিসহ আমার পরিবারের ৭ জন মানুষ সবাই এই কাজটি শিখে ফেলেছি। আমাদের পাশাপাশি স্থানীয় অনেকে এই কাজটি এখন জানে। সে জানায়, পরিচর্যা করতে পারলে পান চাষে ধান এবং আলুর চেয়ে প্রায় দ্বিগুন লাভ। পান চাষের জন্য প্রথম থেকেই বিরল উপজেলা কৃষি অফিস ব্যপক সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে এসেছে। আমার পানের বরজে বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৫ থেকে ৬ জন স্থানীয় শ্রমিক কাজ করে। গানে বলে গাছের পাতা টাকা কেন হয়না। আমি মনে করি পান গাছের প্রতিটি পাতাই হচ্ছে টাকা। আমি অনেক সময় এই পান পাতা বাজারে নিয়ে গিয়ে সে পান পাতা দিয়ে বাজার করে নিয়ে আসি।
এব্যপারে বিরল উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোস্তফা হাসান ইমাম জানান, ওমান ফেরত যুবক হাবিবুর রহমান বিরলে প্রথম পান চাষ করে সফল হয়েছে এবং এলাকায় ব্যপক সাড়া ফেলেছে। তার পানের বরজ দেখার জন্য প্রতিনিয়ত অনেক মানুষ আসে। আমরা তাকে সব ধরণের সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে আসছি। সে প্রমান করে দিয়েছে, বিরলের মাটি শুধু ধান, লিচু, আম, গম, ভুট্টা বা শাক সবজির জন্য উর্বর নয়। পান চাষের জন্যও উর্বর ও উপযোগি এবং পান চাষে ব্যপক লাভ।