ফুলবাড়ী প্রতিনিধি\ অগণিত মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় শেষ বিদায় নিলেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ দিনাজপুর-৫(ফুলবাড়ী-পার্বতীপুর) আসনের টানা ৮বারের সাবেক এমপি, দিনাজপুর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার। তিনটি স্থানে তার নামাজের জানাযা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় পার্বতীপুর আদর্শ কলেজ মাঠে, সকাল সাড়ে ১১টায় দিনাজপুরের ফুলবাড়ী সরকারি কলেজ মাঠে এবং ৩য় জানাযা বোদ জোহর নিজ গ্রাম ফুলবাড়ীর এলুয়ারি ইউনিয়নের জামগ্রামে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয় তাকে।
সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় দিনাজপুরের ফুলবাড়ী সরকারি কলেজ মাঠে সাবেক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারকে রাষ্ট্রীয়ভাবে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। এ সময় এই নেতার মরদেহে প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মো. আল কামাহ্ তমাল, সহকারী কমিশনর (ভূমি) মোহাম্মাদ জাফর আরিফ চৌধুরী, থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান এক দল পুলিশ সদস্য।
পরে জেলা আওয়ামী লীগসহ ১৩ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠন, জেলা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদ, বামদলসহ সকল রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ফুলবাড়ী প্রেসক্লাব, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ ব্যক্তিপর্যায়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান অগণিত মানুষ।
এসময় দিনাজপুর জেলা শাখা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা আনোয়ারুল ইসলাম, থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজার রহমান, মরহুম এই নেতার ছোট ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুশফিকুর রহমান বাবুলসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তি বক্তব্য রাখেন।
উল্লেখ্য, গত রোববার (২৯সেপ্টেম্বর) রাত ৮টার দিকে রাজধানী ঢাকার ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭১বছর। তিনি কয়েক মাস থেকে দুরারোগ্য ব্যাধি থায়রয়েড ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই কন্যা, জামাতা, নাতীনাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
রাজনীতির কিংবদন্তি মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার ১৯৫৩ সালের ২৯ নভেম্বর দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার এলুয়ারি ইউনিয়নের জামগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। দিনাজপুর-৫ (ফুলবাড়ী-পার্বতীপুর) আসনে ৮ম বার একটানা সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন এই নেতা। আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে ১৯৮৬ সালে প্রথমবারের মতো দিনাজপুর-৫ আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হনঅ। পরবর্তীতে ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৯ এবং ২০২৪ সালেও তিনি একই আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালে প্রথমে বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী পরে ভূমি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪সালের ১২জানুয়ারি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী হিসেবে ৭ জানুয়ারি ২০১৯পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ২০১৯ থেকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং ২০২৪ সাল থেকে আইন, বিচার ও সংসদ সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, সাধারণ সম্পাদক এবং সর্বশেষ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।