চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: প্রায় ৪ বছর ৮ মাস ধরে ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড় লালন-পালন করে আসছেন আনিসুল হক শাহ। এবছর পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করছেন ষাঁড়টিকে। পরম যতœ আর পরিচর্যায় লালন-পালন করা ওই ষাঁড়টির নাম রাখা হয়েছে ‘সম্রাট’। তিনি দানবাকৃতির ষাঁড়টির দাম হেঁকেছেন ১৫ লাখ টাকা। সাদা-কালো রঙের এ দানবাকৃতি সম্রাটের উচ্চতা সাড়ে ৭ ফুট ও দৈর্ঘ্য ৯ ফুট এবং ফিতা পদ্ধতিতে লাইভ ওজন প্রায় ৪০ মণ। গত বছর এ ষাঁড়ের ওজন ছিল প্রায় ৩২ মণ। প্রত্যাশানুযায়ী দাম না পাওয়ার কারণে গত বছর ষাঁড়টিকে বিক্রি করতে পারেননি তিনি। ইতিমধ্যেই বিশালাকার ষাঁড়টিকে নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়েছে। দানবাকৃতির ষাঁড়টিকে দেখতে বিভিন্ন গ্রামের লোকজনসহ ব্যবসায়ীরা আসছেন এবং দরদাম করছেন। তবে ষাঁড়ের মালিক আনিসুল হক শাহ এখনই ‘সম্রাট’কে ছাড়ছেন না। তিনি আশা করছেন, ভালো দাম পেলে ক্রেতার হাতে ‘সম্রাট’কে তুলে দেবেন। খামারি মো. আনিসুল হক শাহ দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার সাতনালা ইউনিয়নের জোত সাতনালা গ্রামের ডাঙ্গাপাড়ার বাসিন্দা। তিনি খামারের পাশাপাশি কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত। তিনি দাবি করছেন, এবার ‘সম্রাটে’র চেয়ে বড় গরু দিনাজপুর জেলার মধ্যে দ্বিতীয়টি আর নেই। তিনি বলেন, আমি বাড়িতে একটি গরুর খামার করি। সেই খামারে গরু লালন-পালন শুরু করি। আমার নিজস্ব খামারের একটি গাভি প্রায় ৪ বছর ৮ মাস আগে পশু সম্পদ অধিদপ্তরের ৭২৬ নম্বর প্রুভেন বুল সিমেনের হলেস্টাইন ফ্রিজিয়ান জাতের একটি বাছুর প্রসব করে। এই বাছুরটিকে এ বছর ঈদুল আজহায় বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছি। এ দীর্ঘ সময় ধরে সম্রাট গোয়ালঘরেই রয়েছে। কখনও ‘সম্রাট’কে গোয়ালঘর থেকে বের করা হয়নি। ‘সম্রাট’ এতটাই বড় হয়েছে যে, গোয়ালঘর থেকে বের করতে হলে ইটের দেয়াল কেটে বের করতে হবে। তিনি আরও বলেন, প্রচন্ড গরম ও তাপমাত্রার কারণে ষাঁটটিকে শ্যাম্পু ও সাবান দিয়ে প্রতিদিন ৩-৪ বার গোসল করানো হয়। মশা যাতে কামড় দিতে না পারে সেজন্য গোয়ালঘরে মশানাশক ওষুধ স্প্রে করা হয়। গরুটির মাথার ওপর সর্বদা ৩টি ইলেকট্রিক ফ্যান ঘোরে। আমরা বাড়ির সকলেই ষাঁড়টির দেখভাল করে থাকি। ‘সম্রাট’কে খৈল, ভেজানো ছোলা, গমের ভূষি, ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়া ও সবুজ ঘাসসহ বিভিন্ন প্রকার পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো হয়। ষাঁড়টির পিছনে দৈনিক হাজার টাকার মতো খরচ হচ্ছে। গত বছর কোরবানিতে ‘সম্রাট’কে বিক্রি করতে না পারায় এক বছরে তার পিছনে অন্তত সাড়ে ৪ লাখ খরচ হয়েছে। অনেক ব্যবসায়ী গরুটিকে দেখে দরদাম করছেন। যে দাম করছেন তা আমার পছন্দ না। ‘সম্রাট’কে বিক্রির জন্য দাম দিয়েছি ১৫ লাখ টাকা। তবে সন্তোষজনক দাম পেলে ‘সম্রাট’কে বিক্রি করে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। যে কেউ এসে যোগাযোগ করে ষাঁড়টিকে দেখে পছন্দ হলে ক্রয় করতে পারবেন। তবে আমি আশা করছি, সামনে কোরবানির ঈদে ‘সম্রাট’কে ভালো দামে বিক্রি করতে পারবো। ষাঁড়টির পরিচর্যাকারী আনিসুল হক শাহর ছেলে আশফাকুল হক নোবেল জানান, সম্রাটের থাকার জায়গায় ২৪ ঘন্টা ৩টি ইলেকট্রিক ফ্যান চলে। বিদ্যুৎ না থাকলে হাতপাখা দিয়ে তাকে বাতাস করতে হয়। প্রতিদিন ৩-৪ বার গোসল করাতে হয়। প্রয়োজনমতো খাদ্য ও সঠিক পরিচর্যায় দিনদিন ষাঁড়টির আকৃতি ও ওজন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে ষাঁড়টির ওজন প্রায় ৪০ মণে এসে দাঁড়িয়েছে। আরেক ছেলে রমেল হক জানান, এই বিশাল ষাঁড়টিকে হাটে নিয়ে যাওয়া খুব কঠিন। কারণ তাকে ৪ বছর ৮ মাসে কোনোদিন বাড়ির বাইরে বের করা হয়নি। তাই হাটে নিয়ে গেলে সামলানো কঠিন হয়ে পড়বে। ষাঁড়টিকে বাড়ি থেকে বের করতে ৪-৫ লোককে হিমশিম খেতে হয়। হাটে নেয়া-আনা করাও কষ্টকর হবে। এমনিতেই ষাঁড়টির স্বভাব শান্ত প্রকৃতির হলেও মাঝেমধ্যে চড়াও হয়ে ওঠে। তাই সম্রাটকে বাড়ি থেকেই বিক্রি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাছাড়া ষাঁড়টির উচ্চতা সাড়ে ৭ ফুট ও দৈর্ঘ্য ৯ ফুট হওয়ায় দরজা দিয়ে বের করা যাবে না। তাই ষাঁড়টি বিক্রি হলে দরজা কেটে বের করে ক্রেতার হাতে তুলে দেয়া হবে। ষাঁড়টিকে দেখতে আসা সাবেরউদ্দিন ও রাজিবউদ্দিন বলেন, ফেসবুকে ছবি দেখে দেখতে আসলাম। ছবি দেখে আসলে বুঝতে পারিনি ষাঁড়টি কত বড়! ছবির চেয়ে বাস্তবে ষাঁড়টি দেখতে অনেক বড় ও সুন্দর। চিরিরবন্দর উপজেলা প্রাণিসম্পদ স¤প্রসারণ কর্মকর্তা মো. আবু রায়হান বলেন, সম্ভবত সম্রাটই দিনাজপুরের মধ্যে সবচেয়ে বড় গরু। ফ্রিজিয়ান জাতের গরুটি লালন-পালনে আমরা খামারিকে সর্বদা বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। এবছর গরুটি বিক্রি করতে না পারলে খামারির অনেক লোকসান হয়ে যাবে। এতো বড় গরু লালন-পালন করা যেমন খুব কষ্টকর তেমনি ব্যয় বহুলও।