ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি \এক সময় দিনাজপুরের ফুলবাড়ী অঞ্চলে ধান ও পাট ছিল সমানতালে চাষযোগ্য ফসল। ‘সোনালি আঁশ’ খ্যাত পাট বিদেশে রপ্তানি করে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই পাট চাষ আজ হুমকির মুখে। নানা প্রতিবন্ধকতায় কৃষকের আগ্রহ ক্রমেই কমছে এ ফসলের প্রতি। দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে তুলনামূলকভাবে পাট চাষে আগ্রহ কমেছে কৃষকদের।
শ্রমিক সংকট, জাগ দেওয়ার পর্যাপ্ত জলাশয় না থাকা, দরপতনসহ নানা কারণে আগ্রহ কমেছে এই ফসল চাষে। ফলে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে পাট চাষ। তবে কৃষি অফিস বলছে, পাটের সোনালী দিন ফিরিয়ে আনতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
কৃষকেরা জানান, পাট চাষে ভোগান্তি বেশি, লাভ কম। উৎপাদিত পাট সংরক্ষণের উপযুক্ত জায়গা নেই, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত বা খরায় ফলনও কমে যায়। আবার সরাসরি কৃষকদের জন্য ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে কার্যকর ব্যবস্থা নেই।
শিবনগর ইউনিয়নের দাদপুর গ্রামের কৃষক মামুনুর রশিদ বলেন, ‘গত বছর ১২ বিঘা জমিতে পাট চাষ করে নদীতে জাগ দিই। হঠাৎ বন্যায় সব ভেসে যায়। এবার তাই জমি ফেলে রেখেছি।’
একই ইউনিয়নের দক্ষিণ বাসুদেবপুর গ্রামের মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, ‘গতবার পাট পাতায় বিছা পোকার আক্রমণ হয়েছিল। এরপর জাগ দেওয়ার পর বন্যায় সব পচে যায়। এ বছর আর পাট চাষ করিনি।’
উত্তর সুজাপুর গ্রামের কৃষক মাজেদুর রহমান বলেন, ‘এবার মাত্র ২ একর জমিতে পাট লাগিয়েছি। শ্রমিকের মজুরি এখন ৬০০ টাকা। খরচের তুলনায় বিক্রি কম, লাভ তো দূরের কথা, লোকসান গুণতে হয়।’
স্থানীয় কৃষকেরা বলছেন, শুধু প্রণোদনা নয়, দর নিয়ন্ত্রণ, বাজার ব্যবস্থাপনা, জলাশয় পুনঃখনন ও আধুনিক জাগ পদ্ধতি চালুর মতো বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ জরুরি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) কৃষিবিদ শাহানুর রহমান জানান, এ বছর উপজেলায় ৬০ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী উৎপাদন ধরা হয়েছে ৭১০ বেল। তিনি আরও জানান, পাট চাষে আগ্রহ বাড়াতে ২০ জন কৃষককে প্রণোদনার আওতায় বীজ ও রাসায়নিক সার দেওয়া হয়েছে।