বৃহস্পতিবার , ১৪ অক্টোবর ২০২১ | ১লা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

“হরিপুর উপজেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য” পর্ব(২) -অধ্যাপক করিমুল হক

প্রতিবেদক
ঠাকুরাগাঁও সংবাদ
অক্টোবর ১৪, ২০২১ ১১:১৫ পূর্বাহ্ণ

ব্রিটিশ শাসনামলে হরিপুরের জোতদাররা ছিলেন বনেদি, কুলীন, এবং আর্থিকভাবে বিত্তশালী ও প্রভাবশালী। অন্যদিকে তাঁরা বেশিরভাগই ছিলেন শিক্ষিত, উচ্চবংশীয় এবং আত্মমর্যাদায় সমাজপতি। মুঘল এবং ব্রিটিশ রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনায় প্রদত্ত নামীয় পদ-পদবিতে তাঁরা অধিকাংশই ছিলেন চৌধুরী, সরকার, তালুকদার, পত্নিদার, মন্ডল এবং জায়গীরদার। এই সামন্ত বা জোতদার শ্রেণীর বিকাশ একদিনে ঘটেনি। এর পিছনে রয়েছে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম আর ত্যাগ-তিতিক্ষার ইতিহাস। ভূ- সম্পত্তি অর্জনে ভৌগলিক সুবিধাজনক অবস্থান, সামর্থ্য এবং আর্থিক যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বহুবিধ অন্তরায় মোকাবেলা করতে হতো তাঁদের। নানাবিধ কৌশল অবলম্বন করে স্থানীয় জমিদারদের প্রতি সীমাহীন আনুগত্য প্রকাশ এবং বিশ্বাসী ও আস্থাভাজন হওয়ার জন্য প্রচুর ত্যাগও স্বীকার করতে হতো। ফলে কালের বিবর্তনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এখানকার
জোতদাররা ক্রমশ মহীরুহ হয়ে উঠেন।

অধিকাংশ জোতদার মুসলিম হওয়ার কারণঃ

একথা সত্য যে, দু’চারজন ছাড়া হরিপুরের জোতদাররা ছিলেন প্রায় সবাই মুসলমান। এর কারণ এবং ইতিহাসও অম্লমধুর। অসংলগ্ন হলেও ধারাবাহিক আলোচনা ছাড়া এতদঞ্চলে মুসলমানদের জোতদার হয়ে ওঠার কাহিনী তমসাচ্ছন্ন হয়ে থাকবে।

ঐতিহাসিক আবুল ফজল রচিত “আইন-ই-আকবরী” মতে সম্রাট আকবরের শাসন আমলে সমগ্র দেশকে কতকগুলো সুবা বা প্রদেশে ভাগ করা হয়। প্রত্যেকটি সুবাকে কয়েকটি সরকার এবং প্রত্যেক সরকারকেই আবার কয়েকটি পরগনায় বিভক্ত করা হয়। ভারতবর্ষে প্রধানত বাংলা অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয় সুবা বাংলা। সুবা বাংলায় ছিল ১৯টি সরকার এবং ৬৮২টি পরগনা। সরকার বা পরগনার আয়-এর মূল উৎস ছিল ভূমি রাজস্ব বা জমির খাজনা। প্রজার পক্ষে ভূমি থেকে অর্জিত আয়-এর মধ্য থেকে “রাজার প্রাপ্য অংশকে” “রাজস্ব” বলা হতো। যা এখনও প্রচলিত আছে। সম্রাট আকবরের ভূমি মন্ত্রী টোডরমল, যিনি পরবর্তীতে “রাজা” উপাধি লাভ করেন তিনি রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য তৎকালীন ভূমি ব্যবস্থাপনায় এক যুগান্তকারী সংস্কার সাধন করেন যা “জমা” বা “জাবতি প্রথা” নামে পরিচিতি লাভ করে। এ সময়ে রাজস্ব ব্যবস্থার পুনর্বিন্যাস কল্পে ভূমিকে মোট চার ভাগে বিভক্ত করা হয়। উৎকৃষ্ট এবং উর্বর জমি কে “পোলাজ”ও “পরোতি” এবং অপেক্ষাকৃত অনুর্বর ও বনজভূমিকে “শাসার”ও “বানজার” ভূমি হিসেবে আখ্যায়িত করে রাজস্ব নির্ধারণ করা হতো। রাজস্ব আদায়ের পদ্ধতি ছিল পাঁচশালা বা দশসালা অর্থাৎ কোন জমি রায়ত বা প্রজাদের নিকট ৫ বা ১০ বছরের জন্য ইজারা বা বন্দোবস্ত দেওয়া হতো। যেহেতু সুবা বাংলার অন্যতম সরকার ছিল “সরকার তাজপুর” সেহেতু এর অধীনেই ছিল হরিপুরের জামুন,খোলড়া এবং ভাতুরিয়া পরগনা।

সরকার তাজপুরের অধীনস্থ পরগনা গুলো মুঘল আমল থেকেই মুসলিম অধ্যুষিত ছিল বলে জানা যায়। এর অন্যতম প্রধান কারণ, মুঘল আমলে বহুসংখ্যক পীর-দরবেশ,আউলিয়া ও সূধী- সাধক, জ্ঞানীগুণী ব্যক্তি দলে দলে ধর্ম প্রচারের জন্য সুদূর দিল্লি থেকে এ অঞ্চলে আগমন করেন এবং স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেন। ফলে ধর্মীয় মতাদর্শ বা অনুভূতি প্রচার ও প্রসারের কারণে এতদঞ্চলে মুসলিম জনগোষ্ঠীর আধিক্য লক্ষ্য করা যায়। ব্রিটিশ আমলেও এই ধারা মোটামুটি অব্যাহত থাকে।

অন্যদিকে ব্রিটিশ পূর্ব সময়ে বেশিরভাগ জমিদার ছিল মুসলিম। ফলে জমি ইজারার ক্ষেত্রে মুসলমান জোতদাররা জমিদারদের আনুকূল্য পেয়ে প্রভাবশালী হয়ে উঠে। এসময় জমিদারদের নিয়োজিত কর্মচারীরা অধিকাংশই ছিল হিন্দু গোত্রের এবং শিক্ষিত ভাবাপন্ন। সরকার এবং পরগনার জমিদারদের মধ্যে প্রায় সকল বিষয়ে যোগসূত্র স্থাপনকারী হিসেবে এই রাজস্ব কর্মচারীরা ছিল বেশ ডাকসাইটে। যাঁরা পরবর্তীতে ব্রিটিশ সৃষ্ট জমিদারিতে নিজেদের ভাগ্যকে সুপ্রসন্ন করে তোলে।

( এরপর পর্ব ২ আসছে…)

তথ্যসূত্রঃ

১) “আইন-ই-আকবরী”,-ডক্টর আবুল ফজল।
২)”বাংলায় মুসলিম শাসনের ইতিহাস”- প্রফেসর আব্দুল করিম।
৩) “হরিপুরের লোকসংস্কৃতি”- হামিদুর রহমান চৌধুরী। ৪) “জমি বা ভূমি বিষয়ক আইন” অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান শওকত।

সর্বশেষ - ঠাকুরগাঁও

আপনার জন্য নির্বাচিত

ঠাকুরগাঁওয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় করণীয়” সভা ।

নবাবগঞ্জে সড়ক দূর্ঘটনায় প্রাণ গেল ভ্যানচালকের

ফসলের মাঠে ঐতিহ্যবাহী ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতায় মানুষের ঢল

রাণীশংকৈলে পাট চাষীদের মাঝে বিনামূল্যে সার বিতরণ

বীরগঞ্জে মসজিদের ভিত্তি প্রস্তরের উদ্বোধন

৬৫ বছরে ২০০ মানুষের কবর খুঁড়েছেন বীরগঞ্জের তহিদুল ইসলাম

দিনব্যাপী প্রাণিসম্পদ প্রর্দশনী,অর্ধেক বেলায় শেষ

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে দুইদিন আমদানি-রপ্তানি বন্ধ

দিনাজপুরে মহান বিজয় দিবস কাবাডি প্রতিযোগিতায় বিজয়ী সদর থানা

হরিপুরের হাটবাজার গুলোতে স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই