পঞ্চগড় প্রতিনিধি\ পঞ্চগড়ে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে মূল হোতা বালিয়াডাঙ্গীর বেলালসহ আটক দুই পরীক্ষার্থীর দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল বুধবার গ্রেফতারকৃত তিনজনকে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পঞ্চগড় সদর থানার এসআই সামসুজ্জোহা। রিমান্ড শুনানী শেষে আদালেতের বিচারক এমএম মাহবুব ইসলাম তাদের দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে মৌখিক পরীক্ষা দেওয়ার পর আটক করা হয় পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলা সদরের বড়দাপ এলাকার কলিম উদ্দীনের ছেলে মোকসেদুর রহমান (২৮), একই উপজেলার ছোটদাপ এলাকার আব্দুল জলিলের ছেলে আহসান হাবিব (২৮) এবং ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ইক্ষু সেন্টার এলাকার বাবর আলীর ছেলে বেলাল উদ্দীন (৩৮)। এদের মধ্যে মকসেদুর রহমান ও আহসান হাবিব পরীক্ষার্থী এবং বেলাল উদ্দীন নিয়োগ পরীক্ষার জালিয়াতি চক্রের অন্যতম হোতা বলে জানা গেছে। রাতেই ১৯৮০ সালের পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইনে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে ওই তিনজনসহ এ ঘটনায় জড়িত আরো ২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ২/৩ জনকে আসামী করে পঞ্চগড় থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ ও প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সকাল থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রাথমিক নিয়োগ পরীক্ষার মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। এর মধ্যে পরীক্ষার্থী মকসেদুর রহমান ও আহসান হাবিবের লিখিত পরীক্ষার খাতার হাতের লেখার সঙ্গে মৌখিক পরীক্ষার লেখার অমিল পাওয়া যায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের পরীক্ষা আরেকজন দিয়েছেন বলে স্বীকার করেন তারা। প্রায় ১৬ লাখ টাকার বিনিময়ে প্রক্সি পরীক্ষার্থীর মাধ্যমে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করে দেওয়ার চুক্তি হয়েছিল বলেও জানান তারা। আর এই জালিয়াতির মূলহোতা ছিলেন বালিয়াডাঙ্গীর বেলাল উদ্দীন। তিনি গণউন্নয়ন সমবায় সমিতির পরিচালক। এরপর কৌশলে তাকেও ডেকে এনে তিনজনকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান ও জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার সময় তাদের হাতের লেখা দেখে প্রাথমিকভাবে সন্দেহ হয়। পরে কৌশলে জিজ্ঞাসাবাদে তারা অন্য কাউকে দিয়ে লিখিত পরীক্ষা দিয়েছিলেন এবং এ জন্য তারা মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন করেছেন বলেও স্বীকার করেন। এ জন্য তাদের আটক করে রাখা হয়। সবার পরীক্ষা শেষে কৌশলে নিয়োগ পরীক্ষায় এমন জালিয়াতির মূলহোতা বেলাল হোসেনকে ডেকে এনে তিন জনকেই পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
কে এই বেলাল?
পঞ্চগড়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে বেলাল উদ্দীনকে। পাশ্ববর্তি ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ইক্ষু সেন্টার সংলগ্ন এলাকায় থাকেন তিনি। তার বাবার নাম বাবর আলী। তিনি সেখানকার গণ উন্নয়ন সমবায় সমিতির পরিচালক। তার বিরুদ্ধে সমিতি থেকে ঋণ প্রদানের শর্ত হিসেবে বø্যাঙ্ক চেক নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। ঋণ পরিশোধের পরও বন্ধক রাখা চেক দিয়ে অসংখ্য ব্যক্তির বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনারের মামলাসহ মিথ্যা ও ভুয়া মামলা করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ ও বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে। ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ তার এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন বলে জানা গেছে।