রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি: পৃথিবীতে বেচে রয়েছেন জেলেখা বেগম, পুরোদমে চলাফেরা করছেন তিনি। পেতেন সামাজিক সুরক্ষা কার্ক্রমের আওতায় উপজেলা সমাজ সেবার অধিনে তিন মাস পর পর বয়স্ক ভাতা। কিন্তু হঠাৎ করেই তার বয়স্ক ভাতা আসা বন্ধ হয়ে পড়ে। ভাতা আসার একাধিক সময় যখন অতিবাহিত হয়। তখন কেন হঠাৎ ভাতা বন্ধ হলো তা জানতে অনেকের পরার্মশে উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারেন, তিনি মারা গেছেন তাই তার বদলে অন্যজনকে ভাতার আওতায় আনা হয়েছে। তিনি মারা গেছেন শুনে থমকে দাড়ান বৃদ্ধা জেলেখা। ঘটনাটি ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈল উপজেলার। বৃদ্ধা জেলেখা উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের সন্ধারই গ্রামের আব্দুর রহিমের স্ত্রী। জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখিয়ে ভাতা বন্ধ করার প্রক্রিয়ার সাথে ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, নন্দুয়ার ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বাদশাহ আলী ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল বাড়ী স্বাক্ষরিত একটি মৃত্যু প্রত্যয়ন পত্র সমাজ সেবা অফিসে দেন। সেই প্রত্যয়ন পত্রে জেলেখা বেগমকে গত ২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বরে তারিখে মৃত্যু বরণ করেছেন মর্মে লেখা রয়েছে। প্রত্যয়নে আরো লেখা রয়েছে জেলেখা বেগমের স্থলে আশরাফ আলী নামে ব্যক্তিকে অন্তভুক্ত করে ভাতা প্রদান করা হউক।
এদিকে উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর ওই প্রত্যয়ন পত্রের বলেই কোন যাছাই বাছাই ছাড়াই জেলেখা বেগমের ভাতা স্থগিত করে আশরাফ আলীর নামে আরেক ব্যক্তির ভাতা চালুর প্রক্রিয়া করেন। সব ঠিকঠাকই ছিল কিন্তু চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত প্রত্যয়ন পত্রের মৃত জেলেখা যে আবার জীবিত হয়ে ভাতার জন্য উপজেলা সেবা অফিসে যাবে তার ধারণায় করতে পারেন নি তারা।
ভুক্তভোগী জেলেখা বেগম অভিযোগ করে বলেছেন, উপজেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের যোগ সাজশেই আমার ভাতাটি বন্ধ করে অন্যজনকে দেওয়া হয়েছে। জেলেখা বেগমের প্রতিবেশী সোহেল রানা বলেন, সমাজ সেবা অফিস ও ইউপি সদস্যে বাদশাহ আলী মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এটি করেছে, না হলে এক প্রত্যয়ন পত্রেই কেন ভাতা বন্ধ হবে? তারা কেন অনলাইনের মৃত্যু সনদ যাচাই করলো না। এখন তো সব মৃত্যু সনদ অনলাইনে দেওয়া হয়। এক প্রত্যয়নে যদি ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয় তাহলে ইউনিয়ন সমাজকর্মী আর উপজেলা সেবা কর্মকর্তার কাজ কি?
ভুক্তভোগী জেলেখা বেগম জানান,ভাতার টাকা দিয়েই ওষুধ বড়ি তিনি খেতেন। ভাতার টাকা না পাওয়ায় তিনি বেশ কষ্টে রয়েছেন। বিগত ১৫ মাসের ভাতার টাকা তিনি পাননি। তাই তিনি সম্প্রীতি সমাজ সেবা অফিসে গিয়েছিলেন। সেখানেই জানতে পারেন তিনি মারা গেছেন, তাই তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জেলেখা দাবী করে বলেন, যারা তার এই ভাতা বন্ধের পেছনে দায়ী তাদের সকলের যেন কঠোর শাস্তি হয়।
ইউপি সদস্য বাদশাহ আলী বলেন, বিষয়টি না বুঝে হয়ে গেছে। ভবিষ্যৎ এমনটি আর হবে না। ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বাড়ী বলেন, অসাবধনতা ব:শত প্রত্যয়নটি দেওয়া হয়েছে। তবে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের দায়িত্ব ছিল এটির যাচাই বাছাই করা।
উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, বিষয়টি জানার পর আমরা বিস্মিত হয়েছে। বিষয়টি গুরত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, দায় এড়াতে পারবো না। তবে কেন এমন ঘটলো তা খতিয়ে দেখা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, বিষয়টি জানামাত্রই ব্যবস্থা নিতে উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরকে বলা হয়েছে। জেলেখা বেগমের ভাতা পূনরায় চালু প্রক্রিয়া করা হবে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।