বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি \ হাট বাজারগুলিতে সাধারণত পুরুষ মানুষকে মাছ কেটে দিতে দেখা যায়। হাট বাজারে বসে মাছ কেটে দিতে নারীদের খুব একটা চোখে পড়ে না। তবে জীবনের কঠিন সময় মোকাবেলা করার জন্য বাজারে বসে মাছ কেটে দেওয়ার পেশা বেছে নিয়েছেন দিনাজপুরের বীরগঞ্জের জয়ন্তী রায় (৬০)নামে এক বিধবা নারী। বীরগঞ্জ পৌর বাজারে মাছ কেটে দিয়ে সংসার চলে জয়ন্তী রায়ের। তার এই হার না মেনে পেশায় তার একমাত্র সহায় সম্বল একটি বটি।
জয়ন্তী রায় জানান, ২০ বছর আগে স্বামী পুরানু রায় অসুস্থতা জনিত কারণে মারা গেলে জীবনের কঠিন সময় পার করতে হয় তাকে। এক ছেলে এবং এক মেয়েকে নিয়ে সংসারের হাল ধরতে হয়। সন্তানদের মানুষ করার জন্য অধিক আয়ের আশার স্বামীর ভিটে উপজেলার নিজপাড়া ইউনিয়নের দামাইক্ষেত্র গ্রাম ছেড়ে উপজেলা সদরে এসে বসবাস শুরু করে। পৌর শহরের মাদরাসা পাড়া সাড়ে ৫শত টাকা দিয়ে বাড়ী ভাড়া করে। সেখান থেকে শুরু করেন জীবনের বাকী পথচলা। অর্থ উপার্জনে করতে হয়েছে কঠিন শ্রমের কাজ। এরপর ছেলে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে অনেকটা একা হয়ে পড়েন। বয়সের ভাড়ে নুইয়ে পড়া শরীরে বাসা বাধে নানা রোগ। আগের মতো কাজ করতে না পারায় কমে যায় আয়ের উৎস। কোন মতে বয়স্কা ভাতা দিয়ে জীবন চললেও বর্তমানের নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যের আকাশ ছোয়া দামে কঠিন হতে থাকে জীবন চলার গতি। তাই বাধ্য হয়ে একটি বটি নিয়ে পৌর বাজারে মাছ কাটার কাজে নেমে পড়েন।
মাছ কেটে যে যার খুশী মতো ১০ টাকা ২০ টাকা আবার কেউ খুশী হয়ে ৪০ টাকাও দেয়। সকাল ৮ টা থেকে ১২ টা অবধি মাছ কেটে কোনদিন ১০০টাকা কোনদিন ১২০ টাকা আয় হয় বলে তিনি আরও জানান।
মাছ কাটতে আসা পৌর শহরের বাসিন্দা মোঃ শাহজাহান বুলবুল জানান, ২কেজি বিভিন্ন জাতের ছোট মাছ কিনেছি। এখানে মাছ বিক্রেতারা বড় বড় মাছ কেটে দিলে ছোট মাছে কেটে দেয় না। কাজের লোকের সমস্যার কারণে এই ছোট ছোট মাছগুলি এখান থেকে কেটে নিয়ে যাচ্ছি। প্রতিকেজি মাছ কাটার জন্য ২৫টাকা করে দিতে হবে।
বীরগঞ্জ পৌর বাজার মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ শহীদুল ইসলাম জানান, ২মাস ধরে প্রতিদিন খুব সকালে বটি নিয়ে এসে চুপচাপ বসে থাকেন। মানুষের সাথে বেশ ভদ্র কথা বলেন। প্রথমে খুব একটা কাজ পেতেন না। তবে ছোট মাছ কাটার ক্ষেত্রে উনার নিপুন হাতের কর্মদক্ষতা অনেকের নজর কেড়েছে। তাই বাড়ীতে ছোট ছোট মাছ কাটা ঝামেলা এড়াতে সবাই এখন এখান থেকে মাছ কেটে নিয়ে যান। এখন মাছ কেটে মোটামুটি আয় করেন।
বীরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মোঃ মোশারফ হোসেন বাবুল বলেন, বিধবা নারী হয়েও জয়ন্তী রায় সমাজে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। কারণ ভিক্ষা করে মানুষের কাছে হাত পাতার চেয়ে কাজ করে খাওয়া অনেক সন্মানের। এখানে লজ্বার কিছু নেই। তার জীবন সংগ্রামের প্রতি শ্রদ্ধা রইল এবং যে কোন প্রয়োজনে আমি তার পাশে আছি।