বুধবার , ৫ জুন ২০২৪ | ২রা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দিনাজপুরে লিচু-আমসহ ফলের বাজারজাতে মাহালি সমপ্রদায় বাঁশের খাঁচা বা টুকরি তেরীতে এখন ব্যস্ত

প্রতিবেদক
ঠাকুরাগাঁও সংবাদ
জুন ৫, ২০২৪ ৭:২৭ পূর্বাহ্ণ

এসেছে মধু মাস। জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝে বিভিন্ন ফলের সমাহার। বিশেষ করে দিনাজপুর অঞ্চলের দেশের সেরা লিচু, আম এর সমাহার। আর এ মওসুম শুরুতেই বছরের অন্য সময়ের চেয়ে কদর বাড়ে বাশেঁর ঝুরি বা টুকরির। ফল পরিবহনে ব্যবহৃত বাশেঁর ঝুরি বা টুকরি তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছে দিনাজপুরের সাওতাল সম্প্রদায়ের মাহালি জনগোষ্ঠীর নারী-পুরুষেরা।
শুরুতে চাহিদা কম থাকলেও আম-লিচু পাকার সঙ্গে বেড়ে যায় ঝুড়ি কেনার চাহিদা। মাহালী পাড়ায় তাই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে ঝুড়ি তৈরির কাজ। যদিও এসব হারাতে বসেছে বিকল্প প্লাস্টিকের ঝুরি বা ক্যারেট বাজারে আসায়। তবে সহজ ব্যবহারযোগ্য দাম কম বাশেঁর ঝুরি বা টুকরির প্রতি মানুষের আগ্রহ বেশী। তাই দেশ সেরা লিচু,আমসহ ফলের বাজারজাতকরনে এই ঝুরি বেশী ব্যবহৃত হচ্ছে।
ব্যস্ত সময় পার করছেন দিনাজপুর পৌর এলাকার কসবা আদিবাসী পাড়া, বিরামপুর পৌর এলাকার চাঁদপুর মাহালী পাড়াসহ কয়েক গ্রাম, ফুলবাড়ীর দৌলতপুর ইউপির জয়নগর গ্রামের মাহালি সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষরা।এখন তাদেরও চলছে মওসুম। মাহালি সম্প্রদায়ের লোকজন কমবেশি সবাই বাপ-দাদার ঐতিহ্যবাহী পেশা ধরে রেখেছেন।
বাঁশের চটা দিয়ে চাটাই, কুলা, ঝুরি, ডালা, চাঙারি, টুকরি, ওড়া,চালুনি, মাছ রাখার খলইসহ নানান জিনিস তৈরি করেন তারা। সাওতাল সম্প্রদায়ের মাহালি জনগোষ্ঠী তৈরি করে এসব খাঁচা বা টুকরি। কসবা আদিবাসী পাড়ার পুষ্প মারান্ডী, অজিত মারান্ডী, জয়নগর মাহালিপাড়ায় স্টেফান সরেন ও তার স্ত্রী মিনা মার্ডি, দাউদ হাসদা, বিরামপুর পৌর এলাকার চাঁদপুর মাহালী পাড়ার কমল হেমরমরা বংশ পরম্পরায় ব্রিটিশ আমল থেকেই এ পেশায় জীবিকা নির্বাহ করছেন।
কসবা আদিবাসী পাড়ার কারিগর অজিত মারান্ডী জানান, তিনধরণের খাঁচা তৈরি করেন তারা।এক হাজার লিচু ধারণের খাঁচা ১৫০টাকা, ৫০০লিচু ধারণের খাঁচা ৬০টাকা আর তিনশত লিচু ধারণের খাঁচা ৫০টাকা করে বিক্রি করেন। এখানে ২০টিরও অধিক পরিবার এই বাঁশ শিল্পের উপরে জীবিকা নির্বাহ করে। প্রতিদিন গড়ে ১০টি ছোট বড় খাঁচা তৈরি করতে পারে প্রতিজন কারিগর। খাঁচা তৈরির কাঁচা মাল হিসেবে ব্যবহৃত বাঁশটি প্রথমে কেঁটে শুকানো হয়। একদিন শুকানোর পরের দিন তৈরি করা হয় লিচুর খাঁচা বা টুকরী।
কসবা আদিবাসী পাড়ার পুষ্প মারান্ডী, অজিত মারান্ডী জানান, এখন বাঁশের দাম বেশি। বাঁশ কিনে দিনে ৮-১০টি ঝুড়ি তৈরি করতে পারেন। তারা বলেন, একসময় প্রতিযোগিতা করতাম ঝুড়ি তৈরির। কিন্তু এখন সেই অবস্থা নেই, কারণ আমের জন্য প্লাস্টিকের ক্যারেট ব্যবহার করায় শুধুই লিচুর ঝুড়ি তৈরি করছি। এসময় তারা বলেন, ঝুড়ি তৈরির প্রধান উপকরণ বাঁশের দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভ কমে গেছে।বাঁশের দাম বাড়লেও ক্রেতারা আগের দামেই ঝুড়ি কিনতে চান এবং কেনেনও।
অজিত মারান্ডী বলেন, এখন একটি বাঁশ কিনতে হয় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। একটি বাঁশ থেকে সর্বোচ্চ ৬-৭টি ঝুড়ি তৈরি হয়। প্রতিটি লিচুর ঝুড়ি বিক্রি হয় ১০০-১৫০ টাকায়।
এদিকে, কুরিয়ারসহ বিভিন্ন পরিবহন সার্ভিসে দেখা যায়, বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর জন্য বাঁশের তৈরি ঝুড়িতে বেশী আম ও লিচু বাঁশের ঝুড়িতে পাঠানো হচ্ছে।

সর্বশেষ - ঠাকুরগাঁও