শনিবার , ২৬ অক্টোবর ২০২৪ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হাবিপ্রবি’র ভাইস-চ্যান্সেলরের সাথে কৃষি, সিএসই অনুষদ এবং সাংবাদিক সমিতি ও বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীদের মত বিনিময়

প্রতিবেদক
ঠাকুরাগাঁও সংবাদ
অক্টোবর ২৬, ২০২৪ ১২:০৬ অপরাহ্ণ

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) নবনিযুক্ত মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. এনামউল্যা আজ থেকে বিভিন্ন অনুষদ, শাখা/অফিস ও ছাত্র সংগঠনের সাথে মতবিনিময় শুরু করেছেন। এরই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টায় কৃষি অনুষদ ও সকাল সাড়ে ১১.৩০ টায় কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের শিক্ষকবৃন্দ এবং দুপুর সাড়ে ১২ টায় হাবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতি ও দুপুর ৩ টায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময় করেছেন। কৃষি অনুষদ ও কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের সাথে মতবিনিময় সভায় সংশ্লিষ্ট অনুষদের সম্মানিত ডীন মহোদয়গণের সভাপতিত্বে অনুষদীয় সকল শিক্ষকবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। এ সময় মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর মহোদয় মনোযোগ দিয়ে তাদের সকলের কথা ও অনুষদ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সমস্যার কথা শোনেন। মতবিনিময় সভায় সঞ্চালনা করেন রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. এম. জাহাঙ্গীর কবির।
মতবিনিময় সভা গুলোতে মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. এনামউল্যা বলেন, বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীদের সেন্টিমেন্টকে ধারণ করে আমাদেরকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে, তাদের আত্মত্যাগের কথা ভুলে যাওয়া যাবেনা। আমাদেরকে মাথায় রাখতে হবে এতোদিন আমরা যে যাই করেছি সেটা বর্তমান প্রজন্ম পছন্দ করছে না। এ জন্যই তারা রাস্তায় নেমেছিল। রংপুরের শহীদ আবু সাঈদ প্রথম গুলি খেয়ে একটু ঝুঁকেছিল, দ্বিতীয় গুলি খেয়ে আরেকটু ঝুঁকেছে এবং তৃতীয় গুলি খেয়ে সে পড়ে গেছে, এরপরও কিন্তু তাঁর হাতে লাঠিটা ছিল। এই লাঠি হলো শক্তি ও সাহসের প্রতিক। এর ফলেই কিন্তু জাগরণটা হয়েছে। আজকের যুগে কে আছে যে এভাবে বন্দুকের নলের সামনে দাঁড়িয়ে গুলি খাবে? আপনি আমি হলে তো আমরা পারতাম না, কিন্তু বর্তমান প্রজন্ম পেরেছে। আমি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত সকল শহিদগণের স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই এবং যারা আহত হয়েছেন তাদের আশু সুস্থতা কামনা করছি। তিনি বলেন, এখন আমাদের নিজেদের চাওয়া পাওয়া কে বিসর্জন দিয়ে শিক্ষার্থীরা যা চেয়েছিল সেভাবে কাজ করতে হবে। সর্বস্তরে সমতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে, অন্যথায় জাতির ধ্বংস অনিবার্য। বিপ্লবের যে চেতনা তা ছিল মেধার মূল্যায়ন কিন্তু তারা দেখলো মেধার মূল্যায়ন হচ্ছে না, অযোগ্যরা চাকুরী ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাচ্ছে। এর জন্য আমরা সবাই দায়ী। এই বৈষম্যের প্রেক্ষিতেই বিপ্লব ঘটে। ভাইস-চ্যান্সেলর মহোদয় বুদ্ধি ও মেধার যে বিপ্লব হয়েছে সেই চেতনার মূল্যায়ন করার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান। লোভ-লালসা বিসর্জন দিয়ে রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে বিপ্লবের চেতনা লালন করে শিক্ষার্থীদের সেবায় নিয়োজিত হতে তিনি সকলকে অনুরোধ করেন।
ভাইস-চ্যান্সেলর হিসেবে নিয়োগদানের জন্য তিনি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল জয়ী বিশ্বখ্যাত ক্ষুদ্র ঋণের প্রবক্তা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, মাননীয় শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদসহ হাবিপ্রবি সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনে এগিয়ে নিতে শিক্ষা ও গবেষণার কোন বিকল্প নেই। এ জন্য পর্যাপ্ত ল্যাব সুবিধা থাকতে হবে, শিক্ষকদের গবেষণার দিকে মনযোগী হতে হবে। ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স আয়োজনের উপর গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। পাশাপাশি তিনি শিক্ষক সংকট নিয়েও কথা বলেন এবং সামনের দিনে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান।
হাবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতি
দুপুর ১২.৩০ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকদের সংগঠন হাবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতির সাথে মতবিনিময়ের সময় ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. এনামউল্যা বলেন, আমি যদি কোনোদিন স্বজনপ্রীতি, পক্ষপাতিত্ব, অন্যায়, অনিয়ম, দুর্নীতি করি তবে আমার বিরুদ্ধেও তোমরা লিখবে। সেক্ষেত্রে আমাকে জানানোরও প্রয়োজন নেই। শুধু সঠিক তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে নিউজ করতে হবে। এ সময় সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে সেশনজট নিরসন, ক্রেডিট ফি কমানো, ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বর্ধন, মেডিকেল সেন্টারের স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়নসহ বিভিন্ন দাবী জানানো হয়। এসব বিষয়ে ইতিবাচক ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর মহোদয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
দুপুর ৩ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সাথে ভাইস-চ্যান্সেলর মহোদয়ের মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। ভাইস-চ্যান্সেলরের এই মহান দায়িত্ব অলংকৃত করায় বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানানো হয়। রেজিস্ট্র্রার প্রফেসর ড. এম. জাহাঙ্গীর কবির, প্রক্টর, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক, হল সুপার, সিনিয়র শিক্ষকবৃন্দ ও পরিচালকবৃন্দ, ৩১ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষার্থীরা জুলাই-আগস্টে তাদের আন্দোলনে অংশগ্রহণ ও ত্যাগের স্মৃতি চারন করেন এবং তারা বৈষম্যহীন ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন সমস্যা ও দাবিদাওয়া মৌখিক এবং লিখিতভাবে উপস্থাপন করেন।

সর্বশেষ - ঠাকুরগাঁও