ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি \ তৈয়বুর রহমান লাজু (৪৮)। ছোটবেলা থেকেই গ্রামীণ পরিবেশে বেড়ে উঠেছেন। কৃষির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। চাকরির পেছনে না ছুটে নিজ উদ্যোগে শাকসবজি ও সাথি ফসল চাষ করে এখন একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। গত তিন বছরে কৃষির ওপর মনোনিবেশ করে বদলে ফেলেছেন নিজের জীবন, প্রেরণা জুগিয়েছেন এলাকাবাসীকেও।
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের বাসিন্দা লাজুর বাবা আকবর আলী একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা। বাবার অবসরের পর সংসারের হাল ধরেন লাজু। ব্যবসার পাশাপাশি শুরু করেন পৈতৃক জমিতে চাষাবাদ। এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক লাজু এইচএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন, বর্তমানে আবারও পড়ালেখা শুরু করে স্নাতক করছেন। কৃষি থেকে বছরে তাঁর আয় প্রায় ৮-১০ লাখ টাকা।
লাজু জানান, কৃষি নিয়ে তিনি গত তিন বছর ধরে নিয়মিত পড়াশোনা করছেন। ইউটিউব থেকে কচুর লতি চাষ সম্পর্কে জানতে পেরে নিজে ৩০ শতাংশ জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ শুরু করেন। এতে খরচ হয় ৪৫ হাজার টাকা। ইতিমধ্যে প্রায় ৩০–৩৫ হাজার টাকার লতি বিক্রি করেছেন এবং বাকি ফসল থেকে আরও দুই-আড়াই লাখ টাকা আয়ের আশা করছেন। ফসল শেষে গাছ ও চারা বিক্রির সম্ভাবনাও রয়েছে।
কচুর লতির পাশাপাশি লাজু যৌথ বাগান গড়ে তুলেছেন। ৭৭ শতাংশ জমিতে ২৩০টি গৌরমতি আমগাছ ও ৬০০টি পেয়ারাগাছের সমন্বয়ে একটি বাগান করেছেন। আরেকটি ৭৫ শতাংশ জমিতে ৩৬০টি বারি-৪ জাতের আমগাছের মাঝে ১ হাজার ২০০ বস্তায় আদা চাষ করছেন। এই মৌসুমে এখান থেকে দেড় লাখ টাকার আম বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। ২০ শতাংশ জমিতে শরিফা ও পেঁপে চাষ করেছেন, যেখানে ৪৬টি শরিফা ও ১৬১টি পেঁপেগাছ রয়েছে।
এ ছাড়া ২০০টি বরই গাছ, কলাবাগান, গরুর খামার এবং সেখান থেকে উৎপাদিত গোবর দিয়ে ভার্মিকম্পোস্ট তৈরির হাউজও তৈরি করেছেন। বাগান নজরদারিতে রাখতে বসিয়েছেন সিসি ক্যামেরা।
লাজুর কৃষিকাজে সহায়তা করেন স্ত্রী তৌহিদা বেগম ও ছেলে তৌফিক এলাহী। উপজেলা কৃষি অফিস থেকেও তিনি নিয়মিত পরামর্শ ও সহায়তা পাচ্ছেন। ভবিষ্যতে আরও এক একর জমিতে কচুর লতি চাষের পরিকল্পনা করছেন তিনি।
তার সাফল্য দেখে এলাকার নারীরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। সাবেক ইউপি সদস্য নুরবানু তাঁর দেখাদেখি ২০ শতাংশ জমিতে মালটা, আম, আদা ও পুষ্টি বাগান গড়ে তুলেছেন। কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণও নিয়েছেন তিনি। কৃষক আবুল কালামসহ আরও অনেকে এখন লাজুর পরামর্শে কৃষিতে মনোনিবেশ করছেন।
এ ছাড়া তরুণ কৃষকদের নিয়ে তিনি একটি ফেসবুক গ্রæপ চালু করেছেন, যেখানে কৃষিবিষয়ক নানা তথ্য আদান-প্রদান হয়। পাশাপাশি তিনি একজন ডিজিটাল কনটেন্ট নির্মাতা হিসেবেও সফলতা পেয়েছেন। তাঁর ফেসবুক প্রোফাইলে নিয়মিত ভিডিও আপলোড করে সেখান থেকেও আয় করছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) কৃষিবিদ শাহানুর রহমান বলেন, ‘তৈয়বুর রহমান লাজু একজন অনুকরণীয় কৃষি উদ্যোক্তা। তাঁর সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে অনেকেই কৃষিতে আগ্রহী হচ্ছেন। যৌথ বাগান ও সাথি ফসল চাষে আমরা তাঁকে কারিগরি সহায়তা দিয়ে থাকি। এটি একটি লাভজনক এবং টেকসই পদ্ধতি।’