তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি :
তেঁতুলিয়ায় দ্বিতীয়বারের মতো শুরু হয়েছে নেদারল্যান্ডের টিউলিপ চাষ। এবার বড় পরিসরে উপজেলার দর্জিপাড়া গ্রামে দুই একর জমিতে চাষ করা হচ্ছে ভিনদেশি নজরকাঁড়া টিউলিপ। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইকো সোস্যাল ডেভলেভমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও)’র উদ্যোগে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন-পিকেএসএফের অর্থায়নে এবার বিশজন উদ্যোক্তাদের নিয়ে চাষ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন এবারও টিউলিপ চাষে পর্যটকদের আকৃষ্ট করবে ও অর্থনীতির সমৃদ্ধিতে প্রান্তিক চাষিরা লাভবান হবেন।
দর্জিপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, দুই একর জমিতে টিউলিপের বীজ রোপন করা হচ্ছে। চাষিরা কেউ জমিতে স্প্রে করছেন, কেউ হাত লাঙ্গল দিয়ে লাইন টেনে যাচ্ছেন। সে লাইনের দুপাশে নারী-পুরুষরা মিলে টিউলিপের বীজ মাটিতে রোপন করছেন। গতকাল শেষ হয়েছে বীজ রোপন। রোপনের ২১-২৩ দিনের মধ্যে কলি আসতে শুরু করবে গাছে।
১০ প্রজাতির টিউলিপ সৌন্দর্য ছড়াবে। প্রজাতি ও রংগুলো হচ্ছে- অ্যান্টার্কটিকা (সাদা), ডেনমার্ক (কমলা ছায়া), লালিবেলা (লাল), ডাচ সূর্যোদয় (হলুদ), ষ্ট্রং গোল্ড (হলুদ), জান্টুপিঙ্ক (গোলাপী), হোয়াইট মার্ভেল (সাদা), মিস্টিক ভ্যান ইজক (গোলাপী), হ্যাপি জেনারেশন (সাদা লাল শেড) ও গোল্ডেন টিকিট (হলুদ)।
মুর্শিদা খাতুন, মনোয়ারা খাতুন, আয়েশা সিদ্দিকাসহ উদ্যোক্তা জানান, প্রথমবারের মতো গতবার বছর আমরা প্রান্তিক ৮ জন নারী মিলে এ অঞ্চলে নেদারল্যান্ডের রাজকীয় টিউলিপ ফুটিয়ে ছিলাম। এ অঞ্চলে টিউলিপ চাষ করে আমরা যেমন সফল হয়েছিলাম তেমনি আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছিলাম। এছাড়া টিউলিপ ফুল দেখতে এ অঞ্চলে প্রচুর পর্যটকের সমাগম ঘটেছিল। আশা করছি এবারও টিউলিপের দৃষ্টি নন্দন সৌন্দর্য ও হাসিতে মুগ্ধ করবে।
জানা যায়, শীত প্রধান অঞ্চলের টিউলিপ ফুল। যার বৈজ্ঞানিক নাম ‘টিউলিপা’। এটি নেদারল্যান্ডস’র ফুল। যা অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফুল উৎপাদনকারী উদ্ভিদ। এটি বাগানে কিংবা কাট ফ্লাওয়ার হিসেবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করা হয়। ফুলদানীতে সাজিয়ে রাখার জন্য এর আবেদন অনন্য। বর্ষজীবি ও কন্দযুক্ত প্রজাতির এ গাছটি লিলিয়াসিয়ে পরিবারভূক্ত উদ্ভিদ। টিউলিপের প্রায় ১৫০ প্রজাতি এবং এদের অসংখ্য সংকর রয়েছে। বিভিন্ন ধরণের হাইব্রিডসহ টিউলিপের সকল প্রজাতিকেই সাধারণভাবে টিউলিপ নামে ডাকা হয়। টিউলিপ মূলত বর্ষজীবি ও শীত প্রধান দেশের বসন্তকালীন ফুল হিসেবে পরিচিত।
স্থানীয় সাংবাদিক এসকে দোয়েল বলেন, দেশের সীমান্তবর্তী উপজেলা তেঁতুলিয়া একটি সম্ভাবনাময় পর্যটন এলাকা। এখানে লাখ লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটে প্রতি বছর। গত বছর ইএসডিও পরীক্ষামূলকভাবে নেদারল্যান্ড থেকে আনা টিউলিপ চাষ করে পর্যটক আকৃষ্ট করেছিল। সে টিউলিপ চাষে প্রান্তিক চাষিরাও লাভবান হয়েছিল। এবার ব্যাপকভাবে বড় পরিসরে টিউলিপ চাষ হচ্ছে। আশা করা যায় এবারও পর্যটকদের দৃষ্টি জুড়াবে এ নজরকাড়া টিউলিপ।
ইএসডিও’র সিনিয়র এসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রাম কোর্ডিনেটর আইনুল হক জানান, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন-পিকেএসএফের আর্থিক সহযোগিতায় গত বছরও শারিয়াল ও দর্জিপাড়ায় আমরা আটজন নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে মাত্র ৪০ হাজার বøাব (বীজ) দিয়ে আমরা টিউলিপ চাষ করেছিলাম। এ বছরের প্রেক্ষাপট একেবারেই ভিন্ন। এবার আমরা আরও নতুন বারো জন চাষিকে যুক্ত করে বিশজন চাষিকে দিয়ে শুধুমাত্র দর্জিপাড়ায় দুই একর জমিতে এক লক্ষ বীজ রোপন করছি।
যেহেতু আমরা নতুন কিছু সংযোজন করছি। তার মধ্যে জাতীয় পতাকার আদলে টিউলিপ দিয়ে জাতীয় পতাকা রূপ দেয়া হবে। আর পর্যটকরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে ঘুরতে এসে যাতে কোন প্রকার অসুবিধা না হয়, সেজন্য এখানেই ইকো ট্যুরিজমের মাধ্যমে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তারা তেঁতুলিয়ার ঐতিহ্যবাহী খাবার খেতে পারবেন। আশা করছি এ মাসের শেষের দিকে অর্থাৎ আজ থেকে ১৫দিনের মাথায় গাছ জম্মিয়ে কলি আসবে। ২০-২১ দিনের মাথায় ফুলে ফুলে ভরে যাবে টিউলিপে। আগামী ফেব্রæয়ারি ও মার্চ মাস জুড়ে এখানকার আচার-অনুষ্ঠান, জাতীয় দিবস ও ১৪ ফেব্রæয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস রাঙাবে আমাদের টিউলিপ। মুগ্ধ করবে যেকোন পর্যটকদের।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দ্বিতীয়বারের মতো এবারও দর্জিপাড়ায় টিউলিপ চাষ হচ্ছে। তবে এবার ব্যাপক আকারে। ফুলটি চাষ করতে হলে তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে উত্তরের এ উপজেলায় বরফের পর্বতযুগল হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘা কাছে থাকার এখানে বেশ সময় শীত থাকে। এরকম শীতে টিউলিপ চাষে সুবিধা রয়েছে। বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে। বাণিজ্যিক চাষের উদ্যেশ্যে বাংলাদেশের জলবায়ুর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে টিউলিপ ফুলের জাত উদ্ভাবন করতে গবেষণা চলছে। আশা করছি দ্বিতীয়বারের মতো এবারও টিউলিপ চাষ সাফল্যের মুখ দেখবে এবং পর্যটন শিল্পের ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। #