বিকাশ ঘোষ,বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি/ দিনাজপুরের বীরগঞ্জে
ঢাকা-পঞ্চগড় মহাসড়কের দক্ষিণ পার্শ্ববর্তী এলাকায় ভোগনগর ইউনিয়নের ভাবকী এলাকায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি মনজুরুল ইসলাম এর বাড়ির পাশ্ববর্তী স্থানে সবুজে ঘেরা প্রকৃতির মাঝে দাঁড়িয়ে আছে ৪২১ বছরের পুরনো এক ঐতিহাসিক ঈদগাহ মসজিদটি। মসজিদ ও ঈদগাহটি একনজরে দেখার জন্য প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে নানা বয়সের মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বুধবার (২৬ মার্চ-২০২৫) বিকেলে সরজমিন গিয়ে জানা যায়, ১৬০৪ সালে নির্মিত এই মসজিদটি আজও অতীতের সাক্ষী হয়ে টিকে আছে। মাত্র ১২ ফুট দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের এ মসজিদের উচ্চতা মিনারসহ প্রায় ৩০ ফুটের মতো। একসময় নিয়মিত নামাজ আদায় করা হলেও বর্তমানে এটি শুধুমাত্র দুই ঈদের জামাতের জন্য ব্যবহৃত হয়। চারিদিকে শালবন ঘেরা মনোরম পরিবেশে দাঁড়িয়ে থাকা দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদটি যেন কালের সাক্ষী।
মসজিদটি দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা আলহাজ্ব ইউসুফ আলী জানান, তাঁর পূর্বপুরুষরাই এটি নির্মাণ করেছিলেন। সে সময় এলাকাটি গভীর জঙ্গলে ঢাকা ছিল, যেখানে বাঘের আতংক ছিল। সে আমলে জনবসতী কম থাকায় ছোট পরিসরে নির্মিত হয় মসজিদটি। মাত্র ৮ থেকে ১০ জন মুসল্লি দুই কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতেন। সময়ের পরিবর্তনে এখন চারপাশে গড়ে উঠেছে জনবসতী। আর সেই গভীর জঙ্গলের অস্তিত্ব নেই। কিন্তু মসজিদটি ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে এখনো টিকে আছে। দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকার ফলে এটি প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। গত ২০১১ সালে স্থানীয়দের উদ্যোগে মসজিদটির সংস্কার করা হয়।
বিনির্মাণ কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মিস্ত্রী নূর আলম তিনি জানান, সংস্কারের সময় দেখা যায়, গম্বুজের ওপরে বটগাছ গজিয়ে গিয়েছিল, দেয়ালের ইট খসে পড়ছিল। পুরোনো নকশার আদলে আবার নতুন করে চারটি মিনার ও একটি গম্বুজ নির্মাণ করা হলেও বর্তমানে দুটি মিনার ও একটি গম্বুজ টিকে আছে।
স্থানীয় শিক্ষাবিদ মাহাতাব উদ্দীন মাস্টার বলেন, কালের বিবর্তনে মসজিদের ব্যবহারেও পরিবর্তন এসেছে। আমি শুনেছি, অতীতে একসময় এখানে নিয়মিত নামাজ আদায় করা হতো, কিন্তু এখন এটি শুধুমাত্র ঈদের জামাতের জন্য ব্যবহৃত হয়। অতীতের সেই জঙ্গল ঘেরা নির্জন পরিবেশ আর নেই, তবে এই ঈদগাহ মসজিদটি এখনো দাঁড়িয়ে আছে ইতিহাসের এক নীরব সাক্ষী হয়ে।
স্থানীয়রা মনে করেন, মসজিদটি যথাযথভাবে সংস্কার করা হলে এটি শুধু ধর্মীয় উপাসনালয় নয়, বরং একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবেও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য টিকে থাকবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ উদ্যোগই পারে এই শতাব্দী প্রচীন স্থাপনাটিকে রক্ষা করা সম্ভব।