মোঃ মজিবর রহমান শেখ,, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি,,ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বেলসাড়া গ্রামের মোশারফ হোসেন (৫৫) নামের ১ অসহায় কৃষকের বসতভিটার পাকাঘর উচ্ছেদে ব্যর্থ হয়ে ইউএনও অফিসে ডেকে এনে ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে ১ মাসের বিনাশ্রম সাজা প্রদান করেন। পিতার সাজার এমন সংবাদ পেয়ে তার ছেলে মাহফুজ (৩০) অফিসে ইউএনওর নিকট ক্ষমা প্রার্থী হতে গেলে তাকেও আটক করে ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন। পিতা পুত্রের এমন সাজা হওয়ায় এলাকাবাসীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগি পরিবারের সূত্রে জানা গেছে, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বেলসাড়া গ্রামের মরহুম কুশম উদ্দীনের ছেলে কৃষক মোশারফ হোসেন পৈত্রিক ও কবলা সূত্রে জমি কিনে প্রায় ২০ বছর ধরে পাকাঘর নির্মাণ করে বসবাস করে আসতে থাকে। এরই মাঝে একই গ্রামের কতিপয় ব্যাক্তি পূর্বে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে মোশারফ হোসেন রেকর্ডীয় রাস্তার পাকা ঘর নির্মাণ করেছে মর্মে তার পাকা ঘর উচ্ছেদের জন্য তার বিরুদ্ধে ইউএনও’র নিকট একটি আবেদন করে। আবেদনের প্রেক্ষিতে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী অফিসার অভিযুক্ত কৃষক মোশারফ হোসেন ও অভিযোগকারীদের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট হাজির করা হয়। শুনানী শেষে ইউএনও কৃষক মোশারফ হোসেনকে তার পাকাঘর উচ্ছেদ করতে সময় বেধে দেওয়া হয়। বর্তমানে কৃষক মোশারফ হোসেনের আর্থিক সংকটের মাঝে দিনযাপন করায় ইউএনওর নিদের্শ মান্য করতে ব্যর্থ হয়। এ ঘটনায় বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহা. যোবায়ের হোসেন ও তার ব্যাটালিয়ান ফোর্স, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা সার্ভেয়ার ও স্থানীয় রাজ মিস্ত্রীদেরকে সঙ্গে নিয়ে গত ৩১ আগষ্ট বুধবার বিকালে কৃষক মোশারফ হোসেনের বাড়ীতে গিয়ে রেকর্ডীয় কাঁচা রাস্তা মাপযোগ করে চিহ্ন দেন। পরে ইউএনওর নিদের্শ স্থানীয় রাজ মিস্ত্রীরা কৃষক মোশারফ হোসেনের দীর্ঘ ২০ বছরের দখলীয় পাকা সীমানা পাচীর ভেঙ্গে দেওয়ার পর তার শয়ন ঘরের একটি কক্ষের ওয়াল আংশিক ফুটো করে দেয়। এ সময় কৃষক মোশারফ হোসেন তার শয়ন ঘর না ভাঙ্গার জন্য ইউএনওর নিকট আকুতি মিনতি করতে থাকলে তার কোন কথা না শোনে পাকা ঘরের ওয়াল ভাঙ্গতে থাকে। এ দৃশ্য শয্য করতে না পেরে কৃষক স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহাবউদ্দীনের নিকট ছুটে গিয়ে তার পাকা ঘর ভাঙ্গন রক্ষার জন্য আকূতি জানায়। তার কথা শোনার পর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ইউএনওকে মুঠোফোনে জানালে পাকা ঘর ভাঙ্গন বন্ধ করে ইউএনও কিছুক্ষণের মধ্যে বড়পলাশবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদে হাজির হন। ইউএনও সেখানে কৃষক মোশারফ হোসেন কে তার শয়ন পাকা ঘর সড়িয়ে নেওয়ার জন্য অঙ্গীকার নামায় তার নিকট স্বাক্ষর চাইলে তিনি সেই অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করবে না মর্মে প্রকাশ করে বাইরে চলে আসে। পরে ইউএনও স্থানীয় চেয়ারম্যানকে ৩১ আগষ্ট বুধবার রাত ৮টায় তার দপ্তরে কৃষক মোশারফকে সাথে নিয়ে উপস্থিত হতে বলেন। সেই প্রেক্ষিতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহাবউদ্দীন কৃষক মোশারফ হোসেনকে সাথে নিয়ে ইউএনওর কার্যালয়ে হাজির হন। ইউএনও আবারো কৃষক মোশারফের নিকট স্বাক্ষর চাইলে তিনি সেখানেও স্বাক্ষর দিতে অস্বীকার করায় ইউএনও তার অ্যামোর্ড ফোর্সকে কৃষক মোশারফকে আটক করতে নিদের্শ দেয়। উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে স্থানীয় চেয়ারম্যান সাহাবউদ্দীনের উপস্থিতিতে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রট মোহা. যোবায়ের হোসেন তার দপ্তরে ৩১ আগষ্ট বুধবার রাত ১০টায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে সরকারী কাজে বাঁধা দেওয়ার অভিযোগে কৃষক মোশারফ হেসেনকে ১ মাসের বিনাশ্রম কারা দন্ড প্রদান করে। পিতার সাজা দন্ডের এমন সংবাদ পেয়ে তার ছেলে মাহফুজ (৩০) ইউএনও অফিসে গিয়ে পিতার সাজার দন্ড মৌকুফ চেয়ে ইউএনওর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলে এ সময় ইউএনও তাকেও আটক করে ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করে। পরে ইউএনও পুলিশের মাধ্যমে রাতেই সাজা প্রাপ্ত পিতা-পুত্রকে ঠাকুরগাঁও কারাগারে প্রেরণ করে। এ ব্যাপারে দন্ডপ্রাপ্ত মাহফুজের স্ত্রী রিনা আক্তার বলেন, আমার শশুড়ের বসত ভিটা সংলগ্ন রাস্তার দুধারে জমিতে প্রায় ২০ বছর ধরে বসতভিটায় পাকা ঘর নির্মাণ করে বসবাস করে আসতে থাকি। এলাকার একটি কু্চক্রী মহল মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আমাদের পরিবারকে হয়রানী করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় আমার স্বামী ও শ্বশুড়কে ইউএনও স্যার কৌশলে স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ডেকে নিয়ে গিয়ে ৩ ও ১ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করে। আমার স্বামী ও শশুড় ন্যায় বিচার হতে বঞ্চিত হয়েছে বলে মনে করি। বর্তমানে আমাদের পরিবারের পুরুষ শূন্য হওয়ায় বাকী লোকজনের জীবিকা নির্বাহে অচলাবস্থা হয়ে দিন যাপন করছি। অপরদিকে এহেন ঘটনার প্রেক্ষিতে এলাকায় ব্যাপকভাবে জানাজানি হলে এলাকাবাসীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ ব্যাপারে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহা. যোবায়ের হোসেনের নিট জানতে চাওয়া হলে তিনি উক্ত ঘটনাটি অস্বীকার করে বলেন, বড়পলাশবাড়ী বেলসাড়া গ্রামের রেকর্ডীয় রাস্তায় মোশারফ হোসেন নামের এক কৃষক পাকাঘর তৈরী করায় এলাকাবাসীদের অভিযোগে প্রেক্ষিতে উভয় পক্ষকে অফিসে ডেকে নিয়ে অভিযুক্ত ব্যাক্তির পাকা ঘর সরিয়ে নিতে বলা হলে সে আমার কথা কর্ণপাত না করায় সার্ভেয়ারকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে গিয়ে রাস্তার জমি মাপা হলে এতে সে সরকারী কাজে বাঁধা প্রদান করায় তাকে ১ মাসের বিনাশ্রম কারা দন্ড প্রদান করা হয়। অপরদিকে তার ছেলে মাহফুজ পিতার সাজার দন্ডা আদেশে ক্ষিপ্ত হয়ে অশ্লিলভাষায় গালিগালাজ সহ হুমকী প্রদর্শন করায় তাকে আটক করে ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়। উল্লেখ্য যে, সরকারী কাজে বাধা দেওয়ায় ভ্রাম্যমান আদালতে সাজা প্রদান ২০১৬ সালের হাইকোর্টের এক রায় অনুসারে ‘কোনো ব্যক্তিকে পূর্বেই গ্রেপ্তার বা আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতে উপস্থাপনের মাধ্যমে ২০০৯ সালের মোবাইল কোর্ট আইনে সাজা প্রদান করার সুযোগ নাই। যদি কাউকে এই পদ্ধতিতে সাজা প্রদান করা হয় তাহলে সেই বিচারের পুরো প্রক্রিয়া বাতিল হবে এবং সেই সাজার আদেশ হবে অবৈধ ও এখতিয়ার বহির্ভূত।’ বাংলাদেশ সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এই রায় সংশ্লিষ্ট সবার ওপর বাধ্যকর। অন্যদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন, ২০০৯ অনুসারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারের সামনে তফসিলভূক্ত অপরাধ সংঘঠিত বা উদঘাটিত হলে এবং অভিযুক্ত ব্যক্তি দোষ স্বীকার করলে ঘটনাস্থলে তাৎক্ষণিকভাবে সাজা দিতে পারবে ভ্রাম্যমাণ আদালত। তবে গত ৩১ আগষ্ট বুধবার রাত ১০টায় বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বেলসাড়া গ্রামের মোশারফ হোসেন (৫৫) নামের ১ অসহায় কৃষকের বসতভিটার পাকাঘর উচ্ছেদে ব্যর্থ হয়ে ইউএনও অফিসে ডেকে এনে ভাম্যমান আদালত বসিয়ে ১ মাসের বিনাশ্রম সাজা প্রদান করে। পিতার সাজার এমন সংবাদ পেয়ে তার ছেলে মাহফুজ (৩০) অফিসে ইউএনওর নিকট ক্ষমা প্রার্থী হতে গেলে তাকেও আটক করে ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করে।