আটোয়ারী (পঞ্চগড়) প্রতিনিধিঃ গ্রামের সহ¯্রাধিক অতিথি, ভুরিভোজ আর দিনভর উৎসবমূখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে পঞ্চগড়ের আটোয়ারীতে বট-পাখুরী গাছের বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হলো। ব্যতিক্রমধর্মী ওই বিয়ের ঘটনাটি উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের ঝলঝলী (উলারচাপ) গ্রামে ঘটে। বৃহস্পতিবার (০১ মে) সকাল থেকেই কথিত এই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। শুভলগ্নে শুরু হয় বিয়ের মূল আনুষ্ঠানিকতা। গোধুলীলগ্নে মন্ত্র পড়ে বটকে ‘বর’ ও পাখুরীকে ‘কনে’ সাজিয়ে বিয়ে সম্পন্ন করেন পুরোহিত। উপজেলার ঝলঝলী গ্রামের গ্রাম ঠাকুর প্রাঙ্গণ থেকেই দিনব্যাপী ঢাকঢোল পিটিয়ে সাধারণ বিয়ের মত বিয়ে হয়েছে এই দুই গাছের। অন্যান্য বিয়ের মত ঠাকুরপূজা, মঞ্চ, ঢাকঢোল খাওয়ার অনুষ্ঠান সহ সব আয়োজন ছিলো দেখার মতো। এই দুই গাছের নাম, পিতার নাম, মাতার নাম সহ এলাকাবাসীর অংশ গ্রহণের মধ্যে দিয়ে দেয়া হয়েছে এই বিয়ে। বর বেশে বট গাছের নাম দেয়া হয়েছে অক্ষয় কুমার রায় ও কনে সাজিয়ে পাখরী গাছের নাম দেয়া হয়েছে তিথী রানী। সনাতন ধর্মের দুই গ্রামের দুইজন ব্যাক্তি এই দুই গাছের অভিভাবক সেজে দুই গ্রামের মানুষকে স্বাক্ষী রেখে বিভিন্ন জায়গা থেকে আশা ৪ জন পূজ্যপাদ ঠাকুর মহারাজের উপস্থিতিতে এই বিয়ে সম্পন্ন করা হয়। এই বিয়ে দেখতে উপস্থিত ছিলেন আশপাশের দুই দশ গ্রামের সনাতন ধর্মের হাজারো লোকজন সহ অন্যান্য ধর্মের লোকজনও। বিয়ে অনুষ্ঠানে সনাতন ধর্মের লোকজন অর্থ দিয়ে সহোযোগিতা করে অন্যান্য বিয়ের মত দাওয়াত কার্ড বিতরন করে সহ¯্রাধিক লোকের জন্য খাওয়ার আয়োজনও করেন। স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ^াস, বটগাছ-পাখুরী গাছ একসঙ্গে থাকলে বিয়ে দিতে হয়। সে জন্যই একসঙ্গে বেড়ে ওঠা বট-পাখুরী গাছের বিয়ের আয়োজন করে স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এজন্য ডেকোরেশন দিয়ে সাজানো হয় বিয়ের স্থানটি। বট-পাখুরী গাছের চারপাশ সকালেই গোবর মাটি দিয়ে লেপে আলতার আঁচর দিয়ে সাজানো হয়। বিয়েকে ঘিরে বর-কনের পাশে সাজানো হয় ছাদনাতলা। ছাদনাতলায় মঙ্গলঘট বসিয়ে শুরু হয় বিয়ের নিবেদন। বিয়ে দেখতে বিভিন্ন এলাকার উৎসুক জনতার আগমন ঘটে। বরের বাড়ী থেকে নারী-পুরুষ আসেন বরযাত্রী হয়ে। গেঠে মিষ্টিমুখ করিয়ে অভ্যর্থনা জানানো হয় তাদের। বাদ্য বাজানোর তালে নেচে ওঠেন সব বয়সী নারী-পুরুষ। বর-কনের চারপাশ ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকেন অতিথিরা। বিয়ে দেখতে আসা রুস্তম আলী বলেন, এই ধরনের বিয়ের কথা আমি শুনেছি। কিন্তু কখনোই নিজ চোখে দেখিনি। তাই অনেক আগ্রহ নিয়ে এই বিয়ে দেখতে এসেছি। বিয়ে দেখতে আসা জ্যোতিষ চন্দ্র বলেন, বট ও পাখুরীর এই বিয়েতে কোন মঙ্গল হবে কি না জানি না, তবে ধর্মমতে এই বিয়েতে আমি থাকতে পেরে অনেক খুশি। বিয়ের আয়োজকরা বলেন, সনাতন ধর্মমতে বট-পাখুরীর বিয়ে দেওয়া হলে গ্রামবাসীর মঙ্গল হয়। শুধু তাই নয়, পবিত্র গীতাতেও বট-পাখুরীর বিয়ের কথা উল্লেখ রয়েছে।